সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় ৮৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আধুনিক ভবন হয়নি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

অপু খান চৌধুরী (ব্রাহ্মণপাড়া) কুমিল্লা
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৮ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি নতুন কোনো ভবন। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যালয়ের ভূমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। যার ফলে বিভিন্ন জটিলতা পেরিয়ে নিজ জায়গায় ফিরতে পারছে না বিদ্যালয়টি। তাই ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবনও নির্মাণ হচ্ছে না। ফলে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে জরাজীর্ণ আধাপাকা ভবনে চলছে পাঠদান। এতে করে দিনদিন কমে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রাচীন এই বিদ্যালয়কে রক্ষা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা শশীদল বাজারের সাথে ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয় শশীদল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। দাতা সদস্য তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বাবরু মিয়া বিদ্যালয়ের জন্য ৭৩৪ দাগে ৩২ শতক জমি দান করেন। দানকৃত জায়গায়টি সে সময় ডোবা থাকার কারণে এই জমির পাশেই দাতা সদস্যের অন্য একটি ৭৩২ দাগের ১৬ শতক জমিতে সাময়িকভাবে তখন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা পায়।পরে বিভিন্ন জটিলতায় নিজ জায়গায় আর ফিরতে পারেনি বিদ্যালয়টি। ফলে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টিতে সরকারী অনুদানে একটি টিনের ঘর ও পরবর্তীকালে ১৯৮৬ সালে একটি আধাপাকা টিনশেড ও দুই রুমের আরেকটি ঘর নির্মাণ করা হলেও সমসাময়িক উন্নয়নের আর কোনো ছোঁয়া লাগেনি বিদ্যালয়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আর কোনো আধুনিক ভবনও নির্মাণ হয়নি। যার ফলে ঝরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। এতে করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় অবহেলিত ওই বিদ্যালয়ের নেপথ্যের ঘটনা। ৮৮ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়ে নতুন ভবন না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে জমিসংক্রান্ত সমস্যা। বিদ্যালয়টি তার নিজ স্থানে নেই। বিদ্যালয়ের দলিলের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। আর যে স্থানে বিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে আছে ওই জায়গার দলিল নেই বিদ্যালয়ের নামে। ফলে সেখানে ভবন নির্মাণও সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন বলেন, “এখানে যে জায়গায় স্কুল ভবন নির্মাণ করার দরকার ছিল, সেখানে হয়নি। স্কুলের জমি দখল করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। স্কুল যে জায়গায় আছে তার দলিল স্কুলের নামে নেই। এ সমস্যায় স্কুলের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: নূরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারের জন্য বিগতদিনে অনেক বৈঠক হয়েছে দাতা সদস্যদের সাথে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ এলাকার সাধারণ মানুষ চায় বিদ্যালয়টি তার নিজ জায়গা ফেরত পাক। বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা বেদখলের কারণে এই বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন থেমে আছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাহিদা ইসলাম জানান, আমি এ বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। সে সময় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জিনিস বুঝে নেওয়ার সময় খেয়াল করি বিদ্যালয়টি বিদ্যালয়ের প্রকৃত জায়গায় নেই। বিষয়টি আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করি। এ নিয়ে একাধিকবার দাতা সদস্যদের সাথে বৈঠকও হয়েছে। আজ অব্দি বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। বিদ্যালয়ে জায়গাসংক্রান্ত জটিলতা থাকার কারণে সরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে বিদ্যালয়টি পিছিয়ে আছে। আধুনিক ভবন ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়টি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানকল্পে একটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। শশীদল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ বলেন, স্থানীয়রা বহুবার স্কুলের দাবি নিয়ে এসেছে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলব বিদ্যালয়টি বিদ্যালয়ের নিজ জায়গায় ফিরে যেতে। এতে করে বহুদিন আটকে থাকা উন্নয়ন নিয়ে বিদ্যালয়টি তার প্রাণ ফিরে পাবে। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ ইবনে হুসাইন বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় বিদ্যালয় না থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে ভবন বরাদ্দ হলেও তা ফেরত নেওয়া হয়েছে। জায়গাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে আদালতে একটি মামলা করেছে। মামলাটি চলমান আছে। আমরা ওই মামলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ সাহেব এই সমস্যা সমাধানে একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এভাবেও সমাধানের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com