সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

বরিশালে ‘ইলিশ তো বিদেশ থেকে আমদানি হয় না, এত দাম বাড়ার কারণ দেখছি না’

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক জয়ন্ত কুমার। সকালে বাজারে যাওয়ার সময় ছেলে-মেয়ে বায়না ধরেছে ইলিশ মাছ নিয়ে আসার। তবে বাজার ঘুরে সাধ্যের মধ্যে একটি ইলিশও কিনতে পারেননি তিনি। নিরুপায় হয়ে একটি পাঙ্গাশ মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছেন। শুধু জয়ন্ত কুমারই নন। এমন চিত্র এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অধিকাংশ পরিবারে। ইলিশের চড়া দামে হতাশা প্রকাশ করছেন ইলিশ ক্রেতারা। অবস্থা এমন যে ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে মধ্য ও নি¤œবিত্তের এক শ্রেণির মানুষ। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বরিশালের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায় দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৭২ হাজার টাকা দরে। আর এক কেজি ওজনের মণ ৬৫ হাজার, ৯০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ৪৮ হাজার টাকা। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণ ৩২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা বাজারে আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত দু-একদিন আগেও দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকা দরে। আর এক কেজি ওজনের মণ ৭২ হাজার, ৯০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ৬৫ হাজার টাকা। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণ ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তগুলো ঘুরে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই আশানুরূপ ইলিশ আসছে না। বিগত দিনে এমন সময়ে ১০০-১২০০ মণ ইলিশ আসতো।
কিন্তু বেশকিছু দিন ধরেই ১৫০-২০০ মণ ইলিশ আসছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা তাই সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, এমন সময় আড়তগুলো ইলিশে ভরপুর থাকার কথা। অথচ চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ আসছে না। এরমধ্যে ভরা মৌসুমেও স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নাই। যা আসছে সাগরের ইলিশ। তাই সরবরাহ কম থাকায় দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। পোর্টরোড পাইকারি বাজারে মাছ কিনতে আসা আশরাফ মাহমুদ বলেন, আগে যে ইলিশ কেজি ১৪০০-১৬০০ টাকায় কিনেছি তা এখন কিনতে হচ্ছে ২২০০ টাকায়। মাছের সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মূল্য বাড়িয়েছে। না হলে এ ইলিশ তো আর বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে না। নিজেদের নদ-নদী বা সাগরের মাছ। দাম এত বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। আরেক ক্রেতা আলম মৃধা বলেন, এলাকার বাজার থেকে মাছ না কিনে পোর্টরোড পাইকারি বাজারে এসেছিলাম একটু কম দামে পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখানেও দেখি খুচরা বাজারের মতো চড়া মূল্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এরপরও ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের চারটা ইলিশ কিনেছি ৩ হাজার টাকায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মানুষ কিছু দিনের মধ্যে ইলিশের স্বাদ ভুলে যাবে। সিরাজ হাওলাদার নামে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশ কিনতে এসে দরদামে পোষাতে না পেরে পাঙ্গাশ মাছ কিনতে হয়েছে। ৫০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা হয়েছে। যা আগে ছিল ৪০০-৫৫০ টাকা। পাঙ্গাশ মাছেরও দাম বেড়েছে। ২৫০ টাকা করে কেজি পাঙ্গাশ কিনেছি। যা আগে ছিল ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে। পোর্টরোডের আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশের ম্যানেজার মো. রবিন বলেন, গত এক মাস ধরেই গড়ে দেড় থেকে দুশ মণ ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো পোর্টরোডের মোকামে আসছে। কিন্তু এমন সময় হাজার হাজার মণ ইলিশ আসার কথা। কয়েক বছর আগেও ভরা মৌসুমে পোর্টরোডের মোকামের আড়তগুলোয় দিনশেষে ২ হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো। তিনি আরও বলেন, মৌসুম অনুযায়ী বাজারে ইলিশ কম আসছে। কিন্তু ইলিশের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইলিশ কম থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে। পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির অর্থ সম্পাদক ইয়ার হোসেন শিকদার জানান, আমাদের মোট ১৭০টি আড়তে ভরা মৌসুমে আগে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২০০ মণ ইলিশ আসতো। সেখানে বর্তমানে ১৫০-২০০ মণ পর্যন্ত মাছ আসছে। বেচাবিক্রি আগে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। এখন হচ্ছে মাত্র ৪০-৫০ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, নদী থেকে প্রায় শূন্য হাতে ফেরত আসছেন জেলেরা। তাই আড়তে নদীর ইলিশের দেখা মিলছে না। সাগর থেকে কিছু মাছ আসছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই নদীর মাছ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। তখন দামও কিছুটা কমবে। বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ইলিশ সংকটের এ চিত্র এখন দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীতে। কারণ এখন নদীর ইলিশের সময় না। এখন বাজারে যেসব ইলিশ উঠছে তা সব সাগরের ইলিশ। সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে। তিনি আরও বলেন, অনেক জায়গায় চর পড়ে পানির গভীরতা কমে গেছে। বিশেষ করে সাগর মোহনায় নদীর মুখ চর পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও মাঝে মাঝে নদীতে ইলিশ আসে না। এর জন্য নদীদূষণও দায়ী। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে নজরদারির পাশাপাশি প্রশাসনকে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বরিশালে আগে মাত্র ৬টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিল সেখানে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ এর বেশি। তাই যে মাছ ধরা পড়ছে তা বিভিন্ন আড়তে ভাগ হয়ে যাচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com