চরিত্র মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। ইসলাম মানুষকে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে থাকে। ইসলাম সচ্চরিত্রের অধিকারীদের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ চরিত্রের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ঘোষণা করেছে।
চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার গুরুত্ব: কোরআন ও হাদিসের আলোকে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।
১. সচ্চরিত্র প্রার্থিত বিষয় : উত্তম চরিত্র মুমিনের জীবনে পরম প্রার্থিত বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, তোমার কাছে আমি সুপথ, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থনা করি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৮৯)
২. আল্লাহর নির্দেশ : মহান আল্লাহ মুমিনদের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন (চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা) করে। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৩)
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ : মহানবী (সা.) উম্মতকে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আবু সুফিয়ান (রা.) আমাকে খবর দিয়েছেন যে হিরাক্লিয়াস তাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি তোমাদের কী কী আদেশ করেন? তুমি বললে যে তিনি তোমাদের নামাজের, সত্যবাদিতার, চারিত্রিক পবিত্রতার, ওয়াদা পূরণের ও আমানত আদায়ের আদেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন, এটাই নবীদের বৈশিষ্ট্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৮১) ৪. পবিত্রতা সবার জন্য কল্যাণকর : সব বয়সী মানুষের জন্য চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা কল্যাণকর।
এমনকি যারা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে তাদের জন্যও। আল্লাহ বলেন, ‘বৃদ্ধ নারী, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে। তবে এটা থেকে তাদের বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬০)
৫. পবিত্র থাকতে চাইলে আল্লাহ পবিত্র রাখেন : কোনো ব্যক্তি যদি পূতঃপবিত্র থাকতে চায়, তবে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (পাপ ও ভিক্ষা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাঁকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায় আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪২৭)
৬. পবিত্রতা প্রত্যাশীর জন্য আল্লাহর সাহায্য : যে ব্যক্তি চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকারের লোক যাদের ওপর আল্লাহর জন্য হক রয়েছে, মহান আল্লাহ অবশ্য তাদের সাহায্য করবেন, মুকাতাব (অর্থের বিনিময়ে মুক্তিপ্রার্থী) দাস, যা আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, যে বিবাহিত ব্যক্তি চারিত্রিক পূতঃপবিত্রতা চায় এবং আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামকারী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩২১৮)
চরিত্র ধ্বংস হওয়ার প্রধান কারণ: মানুষের চরিত্র নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ তার ভেতরের নানা ধরনের লিপ্সা। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত কোরো না তার প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, এর দ্বারা তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ১৩১)
সংযম সাধনায় বাড়ে সৌন্দর্য: মুমিনের সংযম ও সাধনায় তার চারিত্রিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উদ্দেশে জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘মুমিনের সম্মান রাত্রি জাগরণে (তাহাজ্জুদে) এবং তার মর্যাদা মানুষ থেকে আত্মনির্ভর হওয়ায় নিহিত।’ (জামিউস সগির, হাদিস : ৮৯)