রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকে বদলে দিতে শিক্ষার্থীদের বড়ো স্বপ্ন দেখার আহ্বান মুহাম্মদ ইউনূসের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫
গতকাল শনিবার বেইজিংয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বিশ্বকে বদলে দিতে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি গতকাল শনিবার বেইজিংয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণে এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র শেখার জায়গা নয়, এটি স্বপ্ন দেখারও জায়গা।’
স্বপ্ন দেখতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, তবে তা ঘটবেই। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে তা কখনও ঘটবে না।’
শিক্ষার্থীদের অতীতের দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘যা কিছু ঘটেছে, কেউ না কেউ আগে তা কল্পনা করেছিল।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘কল্পনা যে কোনো কিছু থেকে বেশি শক্তিশালী।’
তিনি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং অকল্পনীয় বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন, যদিও অনেক সময় এটি অসম্ভব মনে হতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘কিন্তু, মানবসভ্যতার যাত্রা হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা। সেটাই আমাদের কাজ। আর আমরাই তা করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের সভাপতি হে গুয়াংচাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট গং চিহুয়াং অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বলেন, ‘তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের ঘর মনে করেন, কারণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্মানসূচক অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।’
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, উদ্ভাবন ও উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করতে পেরে তিনি গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘এই সম্মাননা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার সেই প্রতিশ্রুতির কথা, যা তিনি গত বছর বাংলাদেশে রূপান্তরকারী পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা লক্ষ লক্ষ যুবকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য করেছিলেন।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁদের স্বপ্ন ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার, যে দেশটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেখানে উদ্যোক্তা বিকাশকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ জন্মগতভাবে দরিদ্র নয়, বরং ভুল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে দরিদ্র হয়ে পড়ে, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে না।’
তিনি বলেন, সমাজে প্রচলিত অনেক ভুল ধারণার কারণেই মানুষ কষ্ট ভোগ করে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানুষ জন্মগ্রহণ করে চাকরি খোঁজার জন্য নয়, বরং তারা সৃষ্টিশীল। মানুষকে চাকরিপ্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে হবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সকল মানুষই উদ্যোক্তা।’
নারীদের বিপুল সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, এমনকি বাংলাদেশের দরিদ্রতম নারীও মাত্র ২০ মার্কিন ডলার ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারে। তিনি আরো বলেন, নারীরা বিশ্বের যে কোনো জায়গায় উদ্যোক্তা হতে পারেন।
শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?… শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে বিশ্বকে পরিবর্তন করা।’
বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে কার্বনমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ‘তিন শূন্য তত্ত্ব’- শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য বেকারত্ব – ও সামাজিক ব্যবসার ওপরও আলোকপাত করেন, যা সমাজের সমস্যাগুলো সমাধান করে।
তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা কার্বন নির্গমনে অবদান না রাখে।
তিনি বলেন, সকলেরই নিজেদেরকে ‘তিন শূন্য’ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলা উচিত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com