বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা

মোস্তাইন বিল্লাহ দেওয়ানগঞ্জ :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে তিন দফা বন্যায় নি¤œাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। শেষ দফা বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় ভেসে ওঠেছে রাস্তাঘাট ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি। এ উপজেলায় রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ২৮৭ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়েও এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার ১৫০ জন কৃষক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রোপা আমন চাষে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ৩৫ হাজারের বেশি কৃষক ৯ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। তার মধ্যে বন্যায় ৪৭৪ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়। ফসলি ক্ষেতের পানি শুকিয়ে জেগে ওঠায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমনের জমির পরিমাণ দাাঁড়িয়েছে ২৪৬ হেক্টর এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়া রোপা আমনের জমির পরিমাণ ২৮৭ হেক্টর। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১৫০ জন কৃষক এবং সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লক্ষ ৫৮৪ টাকা। মৌসুমের শেষে বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি হলেও কৃষকরা শেষ সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নতুন করে রোপা আমন চাষে। উঁচু এলাকার বীজ তলায় চাষ করা আমনের বীজ সংগ্রহ করে চাষিরা তাদের ক্ষতি হওয়া চাষের জমিতে আবারও রোপা আমনের চারা লাগাচ্ছেন। এতে ফলন কম হলেও ক্ষতির একটা বিরাট অংশ ওঠে আসবে বলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কৃষকগণ। এ ছাড়াও চরআমখাওয়া, হাতিভাঙা, ডাংধরা ও পৌর এলাকার একাংশ নিচু জমিতে চাষকৃত রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চুড়ান্ত হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অফিস। ফারাজীপাড়া গ্রামের সুজন মিয়া জানান, দুই দফা বন্যার পর বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে পুনরায় বন্যার শঙ্কা কেটে গেছে ভেবে তিন বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। অল্প দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে গাছ বেড়ে ওঠতে থাকে। কিন্ত তৃতীয় দফা বন্যায় সে রোপা আমন পানিতে তলিয়ে যায়। টানা দুই সপ্তাহ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় চাষকৃত সে রোপা আমন শতভাগ নষ্ট হয়ে যায়। কথা হয় খোলাবাড়ি আব্দুর রশিদের সাথে। তিনি জানান, আমরা কৃষকরা কৃষির উপর নির্ভশীল। চাষাবাদ করে আমাদের সংসার চলে।২ বিঘা জমিতে তিনি রোপা আমন চাষ করেছিলেন। বন্যায় সবটুকু জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে আমরা আবারও বেশি দামে আমনের বীজ কিনে ক্ষেতে রোপন করছি। কৃষি অফিস থেকে আমরা এখনও কোনো সহায়তা পাইনি। চরহাতিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। এতে ব্যয় হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় চাষকৃত সে আমন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সময় লাগবে। পুনরায় ক্ষেতে লাগানোর জন্যে আমানের বীজ সংকটের কারণে সে জমি পতিত ফেলে রাখতে হচ্ছে। আমার মতো এ অঞ্চলের অনেক কৃষকের ফসল বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। চরআমখাওয়া ইউনিয়নের ?ছিলেটপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ভাষ্য, সার বীজ ও শ্রমিকের মজুরী বেশি হলেও এবার আড়াই বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। কিন্তু বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আবারও সে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে ওঠতে চড়া দামে বীজ কিনে দেড় বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছি। জানিনা শেষ সময়ে আমন চাষে কেমন ফলন হবে। পোল্যাকান্দি নামাপাড়া গ্রামের মো. রেজুয়ান মিয়া জানান, বন্যা হবে না ভেবে ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে আড়াই বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু বন্যার পানি ওঠে তলিয়ে যাওয়া তা সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিক সংকট ও বীজ না পাওয়ায় পুনরায় সে জমিতে রোপা আমন লাগাতে পাচ্ছি না। ক্ষেতে চাষকৃত আমন নষ্ট হওয়ায় দৈন্যতার শঙ্কা দেখছি। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর আজাদ জানান, এ অঞ্চলের বেশির ভাগ স্থানীয় নিচু সমতল। শেষ দফা বন্যায় এ উপজেলা ৫ হাজার ১৫০ জন কৃষকের ২৮৭ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩ কোটি ৫৩ লক্ষাধিক টাকার অধিক। তার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুকাইবাড়ী ইউনিয়নে। ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে অনেক কৃষক বীজ কিনে পুনরায় আমনের চাষ করেছেন। বীজের অভাবের কারণে অনেক কৃষক তাদের জমি পতিত রেখেছেন। পতিত জমিতে আগাম ভূট্টা ও সরিষার চাষ করেও কৃষকরা ক্ষতির কিছুটা পুষিতে নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর অব্যাহত রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com