নওগাঁয় আত্রাই নদের বেশ কয়েক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে চালিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলেরখেতসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার পানিবন্দি পরিবার। বর্তমানে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। তাই বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশংকা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন হাহাকার বিরাজ করছে। বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত।সরকারি কোন সহায়তা পৌঁছেনি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার মান্দা উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও অতিবৃষ্টির ফলে ভয়াবহ বন্যায় আত্রাই নদীর উভয়তীরের চার স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত দুই হাজার পরিবার। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এসব স্থানে ভেঙে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে।ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে দেড় হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। বর্তমানে রাত জেগে কাটছে নদের দু’পাড়ের মানুষের জীবন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষরা। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মেরামতের একটানা কাজ করছে শ্রমিকেরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় এসব কাজ বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা প্রশাসন। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৬শ পরিবার এবং রানী নদীর (ফকিন্নি) তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৭শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭শ পরিবার। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের প্রধান নালা (মাস্টার ড্রেন) দিয়ে বন্যার পানি (প্রসাদপুর বাজারে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পূর্ব দিক) প্রসাদপুর বাজারে ঢুকে পড়েছে। এতে বাজারে বসবাসকারী লোকজন পানিবন্দি হয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া বাজারে আসা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকাল থেকে আত্রাই নদে পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত এ নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে। নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী প্রামানিক বলেন, আত্রাই নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক কাচাঘর ভেঙে গেছে। পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। বর্তমানে এসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। তাছাড়া চিকিৎসার জন্য টিম গঠন করে এখন থেকেই ডায়রিয়া প্রতিরোধে কাজ শুরু করতে হবে। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু বন্যার বিষয়ে বলেন, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে বলেও তিনি আরো জানান। অপর দিকে মহাদেবপুরে বন্যায় অত্রাই নদের বেরিবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেরিবাঁধ এলাকার কয়েকশ’ একর জমির ফসল, কলাবাগান, মন্দির পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেঁসে গেছে কয়েকটি পুকুরের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রঞ্জনীতলা প্রহ্বল্লাদের বাড়ির কাছে এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। দ্রুত এটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ১৫ থেকে ২০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এই ভাঙ্গনের ফলে নদীর মেইন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এই ভাঙ্গা স্থান দ্রুত মেরামত করা না হলে মেইন বাঁধও ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা কমপ্লেক্সের পিছনে পশ্চিম দিকে রেইনট্রি তলা থেকে দোহালী পর্যন্ত এক কিলোমিটার দীর্ঘ আত্রাই নদীর পূর্বপাড়ের এই বেরিবাঁধ স্থানে স্থানে ভেঙ্গে যানচলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব আধা ভাঙ্গা স্থান দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ (চোঁয়াতে) করতে থাকে। ফলে আজ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ এলাকার ইটভাটা মালিক হুমায়ুন কবির জানান, বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি দ্রুত এলাকায় ঢুকলে তার তিনটি পুকুর উপচে যায়। এতে তার চাষ করা লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া বিশাল এলাকাজুড়ে কলার বাগান পানিতে ডুবে গেছে। সেখানকার মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জিত কুমার জানান, বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে মন্দির পুরো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান জানান, মহাদেবপুর পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তবে তারা শুধুমাত্র মেইন বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ (মেইনটেনেন্স) করে থাকেন। বেরিবাঁধগুলো দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের। মহাদেবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন বাঁধ ভাঙ্গার কথা স্বীকার করে জানান, বাঁধটা এমনিতেই বড় আকারে ভেঙ্গেছে। কিন্তু এ মুহুর্তে তাদের আর কিছু করার নেই।