সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়ার শিবগঞ্জে আলু বীজ বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট! কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদলে গেছে নারী উদ্যোক্তা রাজিয়ার তারাকান্দায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ চকরিয়ায় সামাজিক বনায়ন উদ্ধারে মানববন্ধন ও র‌্যালি বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক পরিষদের ২০২৪ বিদায় উপলক্ষে সভা বীরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা বিএনপি সভাপতির মতবিনিময় সভা পাঁচবিবিতে কোয়েল পাখি পালনে হাসানের মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা মোংলার মাটিতে কোন ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই হবে না-সমন্বয়ক মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ সিংড়ায় আমি মধ্যবিত্ত কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মুক্তির ডাক ৭১: নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

রাজধানী মার্কেট: অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়েই চলছে ব্যবসা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

টিকাটুলীতে অবস্থিত রাজধানী সুপার মার্কেটটি বেশ বড়। প্রতিদিনই ভিড় থাকে ক্রেতাদের। মার্কেটের সাতটি ব্লকে শত শত দোকান। কাপড়, জুতা, প্রসাধনী, জুয়েলারি ও ঘর সাজানোসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। ভেতরে যাতায়াতের জন্য রয়েছে সরু পথ। গাদাগাদি অবস্থা। আলো-বাতাস আসার কোনো পথ নেই। এর মধ্যে আবার পুরো মার্কেটের ওপর টিনশেড। দোকানগুলোতে মালামাল এমনভাবে রাখা যে, এক দোকানে আগুন লাগলে অন্য দোকানে সহজেই ছড়িয়ে পড়বে। বিদ্যুতের লাইনগুলোও নেওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। ফলে যে কোনো সময় শর্ট সার্কিট থেকে ঘটতে পারে অগ্নিকাণ্ড। যদিও চার বছর আগেই আগুনের মুখ দেখেছে মার্কেটটি। এর মধ্যে চলতি বছর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস। যে তালিকায় রয়েছে ‘রাজধানী মার্কেট’। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যদিও সম্প্রতি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, পানির ট্যাংকি স্থাপনসহ নানা কাজ করা হয়েছে রাজধানী মার্কেটে। একই সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য গভীর রাতে দেওয়া হচ্ছে পাহারা। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে ঢাকা শহরে মোট ১২৮টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে তা বেড়ে হয় ১৫৫টি। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের আগুন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে থাকা মার্কেটটিতে আগুন লাগে ভোররাতে। আগুনে ২১৭ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিঃস্ব হন অনেক ব্যবসায়ী। এর আগে গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেদিন পুড়ে যায় বঙ্গ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট ও এনেক্সকো টাওয়ার। নিঃস্ব হয়ে যান তিন হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। ক্ষয়ক্ষতি হয় ৩০৫ কোটি টাকার। এর রেশ কাট না কাটতেই ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পুড়ে যায় ২২৬টি দোকান। দুটি আগুনই লাগে ভোররাতে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এসব মার্কেটের কোনোটিতেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন আতঙ্কে। তারা বলছেন, একের পর এক মার্কেটে আগুন তাদের শঙ্কায় ফেলছে। আগুন লাগলে পড়তে হবে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিতে। গভীর রাতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে তাদের কিছু করার থাকবে না।
রাজধানী মার্কেট: রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সেখানকার কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে মার্কেটটি নির্মাণ করেন। প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ১৪ জন মিলে পরিচালনা করেন মার্কেট। এরমধ্যে একজন পরিচালক ছিলেন আজমল হোসেন বাবু। বর্তমানে তার ছেলে মো. ফজলুল হক বিপ্লব মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। তবে শুরুতে সভাপতি ছিলেন রতন নামের এক ব্যবসায়ী। এরপর বেশ কয়েক বছর ওয়ারী থানার সাবেক কাউন্সিলর মইনুল হক মঞ্জু ছিলেন রাজধানী সুপার মার্কেটের সভাপতি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ছয় মাস আগে তিনি জেলে যাওয়ার পর মার্কেটের কোনো কমিটি ছিল না। তখন এডহক কমিটি করা হয়। মার্কেটের তিনটি গ্রুপ ও দোকানিদের প্রতিনিধি নিয়ে করা হয় এ কমিটি। প্রায় দেড় বছর ছিল এ কমিটি। এরপর আবার কমিটি হয়। সেখানে নতুন করে সভাপতি হন মো. ফজলুল হক বিপ্লব। সাধারণ সম্পাদক হন আরেক ব্যবসায়ী টিটু। মার্কেট সমিতি সূত্রে জানা যায়, ৭০০টি দোকান রয়েছে এখানে। কোনো ব্লকে ১০০টি আবার কোথাও দেড়শোর মতো দোকান। কোনো দোকানে মালামাল রয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩০ লাখ টাকার। আবার কোনোটায় ৬০-৭০ লাখ টাকার মালামাল। প্রায় ১৮০-২০০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে মার্কেটজুড়ে। এসব দোকানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০০টি দোকান সভাপতি বিপ্লবের। মার্কেটটিতে মাসে এক হাজার ২৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয় দোকানিদের। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া রয়েছে দোকানের। মার্কেট কমিটির সভাপতি ৭০০ দোকানের কথা বললেও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মার্কেটটিতে এক হাজার ৭৯৫টি দোকান রয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশপাশের দোকান মিলে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি দোকান। এরমধ্যে বেশ কিছু দোকান অবৈধ।
মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব: অভিযোগ আছে, মার্কেটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বর্তমান সভাপতি বিপ্লব, সাবেক কাউন্সিলর মঞ্জু ছাড়াও আবুল বাশার গ্রুপের মার্কেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান সভাপতি বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে বিরোধী গ্রুপ আছে। তারা মার্কেট নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে মার্কেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর মইনুল হক মঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, গত চার বছর ধরে আমি দায়িত্বে নেই। দখলদার বাহিনী এটা দখল করে নিয়ে গেছে। হাইকোর্টের রায়ও রয়েছে আমাদের কমিটি বৈধ। হাইকোর্ট তাদের মার্কেট ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু তারা এটা মানে না। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমার কাছে কোনো রাস্তা নাই। তারাই (বর্তমান কমিটি) মার্কেট চালায়, তারাই সবকিছু করে। আমি এখন কিছু বলতে পারবো না কীভাবে মার্কেটের ঝুঁকি এড়ানো যায়। কারণ আমি মার্কেটটিতে চার বছর ধরে নেই।
ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা: ২০১৯ সালে রাজধানী মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছর (২০২৩ সাল) বেশ কয়েকটি মার্কেটে লাগে আগুন। এ অবস্থায় অগ্নিঝুঁকি কমাতে বৈদ্যুতিক ফ্যান লাগানো, পুরাতন তার পরিবর্তন, নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এক্সটিংগুইশার দেয় মার্কেট সমিতি। এছাড়া স্থাপন করা হয় পানির ট্যাংকি। অন্যদিকে বঙ্গমার্কেটে আগুনের পর ফায়ার সার্ভিস প্রতি রোববারই প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। যদিও এখন আর সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না।

সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে রাজধানী মার্কেট। বাকি সময় বন্ধ রাখা হয় বিদ্যুতের লাইন। তবে নিরাপত্তার জন্য আলাদা স্থাপন করা বিদ্যুতের লাইন চালু থাকে। ৩২ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে মার্কেটটিতে। এরমধ্যে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মার্কেটে থাকা মায়মুনা ফেব্রিক্সের দোকানি নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকা-ের পর আমাদের সিলিন্ডার (এক্সটিংগুইশার) দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আগুনের ঝুঁকি এখন আগের চেয়ে কিছুটা কম। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে রাজধানী মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুল হক বিপ্লব বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর আমরা দুটি নতুন পানির ট্যাংকি স্থাপন, পুরাতন দুটি সংস্কার, বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তন, দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা ও মহড়া দিয়েছি। মার্কেটের টিনশেডে যেন আগুন না লাগে ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশ অনুযায়ী যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নিয়েছি। দেখা গেছে এ ধরনের মার্কেটে ভোররাতে আগুন লাগে। ফলে শুধু রাতে পাহারার জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাত ৩টার পর থেকে তারা হানিফ ফ্লাইওভার এবং আশপাশের ভবন থেকে পাহারা দেয়। আমরা সম্পূর্ণ নজরদারিতে রেখেছি পুরো মার্কেট।
রাজধানী মার্কেটে কথা হয় সুমন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোস্তফা কামাল সুমনের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, একের পর এক টিনশেড মার্কেটে আগুন লাগছে। আমরাও শঙ্কার মধ্যে আছি। কখন আমাদের এখানেও আগুন লেগে যায়। আর যদি আগুন লাগে একেক জনের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।
তামান্না সুজের দোকানি আরিফ বলেন, বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগতে দেখেছি। আমাদের মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ। আগুন লাগলে তো আমাদের কিছু করার নাই। মুক্তা সুজের মালিক মো. মিলন বলেন, ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছি। আগুন লাগলে আমাদের আর কি করার আছে। ভাগ্য খারাপ হলে যদি আগুন লাগে তাহলে সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। এদিকে বর্তমান রাজধানী মার্কেটটি ভেঙে বহুতল মার্কেট নির্মাণের চিন্তা করা হয়েছে। এজন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করে মার্কেট সমিতি। বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য দুই পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। তাই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে মার্কেট সমিতির সভাপতি বিপ্লব বলেন, মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। কী আলোচনা হয়েছে তা এখন বলা যাবে না। তবে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। মার্কেটের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক (শিল্প ও বাণিজ্য) মো. আছির উদ্দীন সরদারকে গত কয়েকদিন ধরে ফোন দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর অগ্রগতি কোন পর্যায়ে এটা আমি বলতে পারবো না।

রাজধানী মার্কেটের অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. শাহজাহান শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নোটিশ করি, সংশ্লিষ্টদের জানাই। মার্কেটের বাইরে আমরা বেশি কিছু করতে পারি না। নিয়মিত মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা মার্কেটে প্রতি সপ্তাহে মহড়া করার সক্ষমতা নেই আমাদের। রাজধানীতে অনেক মার্কেট রয়েছে, বিভিন্ন সময় আমাদের মহড়া চলে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com