অবৈধ, অসাংবিধানিক; গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংসকারী নৈশভোটের সরকারের পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষ সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা দক্ষিণ আয়োজিত রুকনদের এক ভার্চুয়াল শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি এবিএম কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার। অনুষ্ঠানে দারুসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নরসিংদী জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমির মো: শাহিনুর ইসলামসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ভোট চুরির মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে দেশে লাগামহীন লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি জামায়াতের ফর্মূলা হলেও সে ক্রেডিট ছিনতাই করে এই পদ্ধতির সরকারের দাবি আদায়ের জন্য তারা দেশে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে তারা সে কথা ভুলে গেছে। তারা এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তিনি সরকারকে হঠকারিতা পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। অন্যথায় প্রয়োজনে ঢাকা ঘেরাও করে হলেও সরকারকে গণদাবি মানতে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, রুকনরা সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। তাই চলমান আন্দোলনকে বেগবান ও সফল করার জন্য তাদেরকে ময়দানে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী সৃষ্টি, ইলম ও আমলের পরিশুদ্ধির জন্য বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে দাওয়াত সম্প্রসারণ, সমাজকল্যাণমূক কাজে মনোনিবেশ ও মানুষের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। তিনি ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গে বলেন, জায়নবাদীরা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই অশান্ত ও অস্থির করে রেখেছে। প্রতিদিনই মজলুম ফিলিস্তিনের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে পবিত্র ভূমি। তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। অন্যথায় দখলদার বাহিনীর নির্মমতা বন্ধ হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশ ও জাতি এক মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জায়নবাদী ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনের ওপর চড়াও হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী বাকশালীও জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেয়ে বসেছে। তাই দেশ ও জাতিকে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে হলেও তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে মজবুত করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জালেম সরকারের পতনের লক্ষ্যে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেন, সরকার আবারো পাতানো ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নতুন করে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু জনগণ সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনো বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তিনি জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে রুকনদেরকে কার্যকর গণআন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, জামায়াত দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সব সময়ই আপসহীন। এ কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য রুকনদেরকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি ফ্যাসীবাদী সরকারের দ্রুত বিদায়ের লক্ষ্যে সকলকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি