ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল অব্যাহত বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪ হাজার অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে শিশুই রয়েছে ১৬০০’র বেশি। এদিকে, হামলা অব্যাহত থাকায় মিসর থেকে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দেরি হচ্ছে। তৈরি হয়েছে একপ্রকার অনিশ্চয়তা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১ হাজার ৬৬১টি। সেইসাথে আহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৬০ জন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোর মেঝে, মাটিতে, বারান্দায় অপারেশন করতে হচ্ছে।
অর্থোডক্স চার্চে হামলায় ১৮ খ্রিস্টান ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, সেখানে একটি গ্রিক অর্থোডক্স চার্চে বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বোমা হামলায় ১৮ খ্রিষ্টান নিহত হয়েছেন। তবে চার্চের পক্ষ থেকে মৃত্যুর চূড়ান্ত তথ্য জানানো হয়নি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ৫০০ মুসলিম ও খ্রিস্টান ইসরাইলি বোমা হামলা থেকে বাঁচতে গির্জাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল।
পশ্চিম তীরে অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত: অধিকৃত পশ্চিম তীরের নূর শামস এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনিক হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এদের মধ্যে ৭টি শিশুও রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাস-ইসরাইল সংঘাত শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরের ৯০০ জনের মতো ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গত রাতেও সেখানকার একটি উদ্বুস্তু শিবির থেকে ১০ জনকে তুলে নেয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান শাইখুল আজহারের:ফিলিস্তিনিদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন মিসরের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়াতুল আজহারের শাইখ আহমাদ আত-তাইয়াব।
তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে আরব বিশ্বকে কর্তৃত্ববাদী পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরতার বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যে অর্থ-সম্পদ ও শক্তি-সামর্থ্য দিয়েছেন, তা নিয়ে তাদের ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।
তিনি আরো বলেন, আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন এক শত্রু আক্রমণ করেছে, যাদের মধ্যে নেই মানবতার নূন্যতম বোধ। যারা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের শিক্ষা ও দীক্ষাকে ছুঁড়ে ফেলে প্রবৃত্তি পূজায় লিপ্ত। এমন শত্রুদের মোকাবেলায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো সবার জন্য আবশ্যক।
শাইখুল আজহার বলেন, ফিলিস্তিনিদের বুঝা উচিৎ যে পশ্চিমারা যতই সামরিক শক্তি নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ুক, তাদের এই শক্তি ফিলিস্তিনিদের মোকাবেলায় একদম দুর্বল। কারণ, ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমিতে যুদ্ধ করছে। আর পশ্চিমারা লড়ছে অন্যের ভূমিতে। এছাড়া তারা এমন বিশ্বাসের পেছনে নিজেদের শক্তি খরচ করছে, যার যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই।
এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদেরকে ইসরাইলের বর্বোরচিত হামলার সামনে সটান দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিহত করার আহ্বান করেন। একইসাথে ওই জংলি জানোয়ারদের ফাঁদে পা না দেয়ার বিষয়েও সতর্ক করেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দখলদাররা ফিলিস্তিনের এক হাসপাতালে হামলা করে। এতে ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
খুলে দেয়া হয়নি রাফাহ ক্রসিং: মিসরের সিনাই অ লের এল আরিশ বিমানবন্দরে খাদ্য, ওষুধ, পানীয়, পরিশোধক, চিকিৎসা পণ্য ও কম্বল জমা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়নি রাফাহ ক্রসিং। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজার সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিসর। রাফাহ সীমান্ত অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখ-ের একমাত্র ক্রসিং, যেটি ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত নয়। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে হয়েছে, এটি শনিবার খুলতে পারে। তবে মানবিক কারণে ক্রসিংটি খোলার জন্য আগের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস কায়রো সফরে বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, দীর্ঘস্থায়ী ইসরাইলি অবরোধের প্রভাব সম্পর্কে ভয়াবহ সতর্কতার পরে ‘দ্রুত, নিরবচ্ছিন্ন মানবিক অ্যাক্সেস’ হওয়া দরকার। গুতেরেস বলেছিলেন, ‘রাফাহ ক্রসিং এবং এল আরিশ বিমানবন্দর শুধুমাত্র সমালোচনামূলক নয়। তারা আমাদের একমাত্র আশা এবং গাজার জনগণের জন্য লাইফলাইন।’ সূত্র : আলজাজিরা