সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়ার শিবগঞ্জে আলু বীজ বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট! কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদলে গেছে নারী উদ্যোক্তা রাজিয়ার তারাকান্দায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ চকরিয়ায় সামাজিক বনায়ন উদ্ধারে মানববন্ধন ও র‌্যালি বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক পরিষদের ২০২৪ বিদায় উপলক্ষে সভা বীরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা বিএনপি সভাপতির মতবিনিময় সভা পাঁচবিবিতে কোয়েল পাখি পালনে হাসানের মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা মোংলার মাটিতে কোন ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই হবে না-সমন্বয়ক মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ সিংড়ায় আমি মধ্যবিত্ত কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মুক্তির ডাক ৭১: নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

খালেদা জিয়া এবং মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্থা বন্ধ করা উচিত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩
শেখ হাসিনা,প্রফেসর ইউনূস এবং খালেদা জিয়া

ফ্রি প্রেস জার্নালের প্রতিবদেন 
‘বিগ ব্রাদার’ শব্দটির অর্থ বেশ নেতিবাচক এবং আপত্তিকর। কোনো বড় ও শক্তিশালী দেশ যখন একটি ছোট ও দুর্বল দেশের ওপর অযাচিত চাপ প্রয়োগ করে, তখন সেটিকে আধুনিক কূটনীতির ভাষায় ‘বিগ ব্রাদার’ বলে ডাকা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য ভারতকেও প্রায়শই ‘বিগ ব্রাদার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এখন নয়াদিল্লির উচিত এই ‘বিগ ব্রাদার’ না হয়ে সত্যিকারের বড় ভাই হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক পরামর্শ দেয়া, যাতে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্থা বন্ধ করেন। হাসিনা যদি ভারতের কথা শোনেন, তাহলে এটা তার নিজেরতো বটেই, পাশাপাশি ভারতের ভাবমূর্তিও উজ্জল করবে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলাফল শেখ হাসিনা ও ভারত উভয়ের জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৮ এবং প্রফেসর ইউনূসের বয়স ৮৩। তাদের বাকি থাকা জীবনটুকু শান্তিতে বাঁচার অধিকার আছে। শেখ হাসিনার নিজের বয়সও ৭৭ বছর। তারপরেও তিনি খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে খেলছেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন না। আবার প্রফেসর ইউনূসকে যেভাবে বিচারিক হেনস্থা করা হচ্ছে, সেই প্রভাবও তার স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে।
খালেদা জিয়া দুইবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র প্রধান। ২০২০ সাল থেকে তিনি হাউস অ্যারেস্টে আছেন। গত সপ্তাহে শেখ হাসিনা সরকার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য খালেদা জিয়ার জার্মানি যাওয়ার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তার লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস এবং হার্টের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা প্রকাশ্যে বলছেন, খালেদা জিয়া বিদেশে জরুরি চিকিৎসা না পেলে তার মৃত্যুর ‘উচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে। বাংলাদেশের ১৭ জন শীর্ষ চিকিৎসকের একটি প্যানেল ঘোষণা করেছে যে, তাদের আর কিছু করার নেই ।
শেখ হাসিনা শুধু খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতেই বাধা দিচ্ছেন না, বর যুক্তি দিচ্ছেন যে- তার বয়স এত বেশি যে এমনিতেই যেকোনো সময় তার মৃত্যু হতে পারে। শেখ হাসিনা সম্প্রতি লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো ৮০’র উপরে । সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এতো কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
বর্তমানে বেঁচে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাতদের একজন প্রফেসর ইউনূস। তিনিও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার পর তিনি বাংলাদেশিদের কাছে নায়কে পরিণত হয়েছেন। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তার যুগান্তকারী কাজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। গরীবের ব্যাংকার হিসাবে পরিচিত প্রফেসর ইউনূস বিশেষ করে নারীদের চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন। বাংলাদেশের বাইরেও বহু মানুষ তাকে অনুসরণ করেন। অনেক বিশ্বনেতাকেই তার ব্যক্তিগত বন্ধুদের মধ্যে গণনা করা যেতে পারে ।
কিন্তু এই মাসে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে হয়েছে প্রফেসর ইউনূসকে। এ জন্য তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরের সফর সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইউনূস নির্ভয়ে ঘোষণা করেন যে, তিনি কাউকে ভয় পান না কারণ তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তিনি কারও নাম বলেননি, তবে সবাই জানেন যে এই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাকে ইঙ্গিত করেছিলেন। ইউনূসের বদনাম ও তাকে ছোট করতে বছরের পর বছর ধরে নানা কথা বলে চলেছেন শেখ হাসিনা। প্রকাশ্যে তিনি এই নোবেল বিজয়ীকে ‘গরীবের রক্তচোষা’ বলে অপমান করেছেন। যে মামলাটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে তাকে উপস্থিত হতে হয়েছিল, তা তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৭৫টি ফৌজদারি ও শ্রম মামলার একটি। এর সবগুলো মামলাই করেছে শেখ হাসিনার সরকার কিংবা প্রশাসনের সমর্থন পাওয়া কিছু মানুষ। প্রফেসর ইউনূস ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল চালুর চেষ্টা করেছিলেন আর মূলত তার খেসারতই এখনও তাকে দিতে হচ্ছে। সে সময় শেখ হাসিনা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া উভয়কেই সেনা-সমর্থিত অন্তর্র্বতীকালীন প্রশাসন কারাগারে পাঠিয়েছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের একজন হিসেবে সাধারণ বাংলাদেশিরা ইউনূসকে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। সে ডাকেই সাড়া দিয়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার শাসনব্যবস্থার একটি বিকল্প তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি দল চালু করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, আমি আর রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছি না। কিছু করার জন্য এখনই সেরা সময়। যদিও তার অবস্থা হয়েছিলো অনেকটা পানিবিহীন মাছের মতো। বিষয়টি অনুভব করে দুই মাসের মধ্যেই তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু তবুও এখনও তাকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে আসার জন্য এবং রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বলার জন্য ইউনূসকে ক্ষমা করেননি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর, তিনি চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড গড়তে আগ্রহী।
ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক হয়রানি বন্ধের জন্য ১৭০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং শতাধিক নোবেল বিজয়ী। কিন্তু শেখ হাসিনা তাতে দমেননি। ইউনূসকে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি তাকে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের ইউনূসের পক্ষে লবিং বন্ধ করতে বলেছেন। এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তিনি। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে একমাত্র বড় ভাই হিসেবে কেবল ভারতই ইউনূস ও খালেদা জিয়াকে সাহায্য করতে পারে। নয়া দিল্লির কাছে তার এই ‘পবিত্র দায়িত্ব’ পালন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। (এসএনএম আবদি একজন স্বাধীন সাংবাদিক। তিনি ভারতের পররাষ্ট্র নীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com