যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বে’তে আগামী সপ্তাহে সাক্ষাৎ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে। বিশ্ব রাজনীতিতে যখন দুই দেশ মেরুকরণের চেষ্টা করছে, স্ব স্ব প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা করছে তখন তাদের এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে থাকবে সচেতন বিশ্ববাসী। তাদের বৈঠকের বিষয়ে বিবিসিকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের দু’জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১৫ই নভেম্বর তাদের মধ্যে এটা হতে যাচ্ছে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি সাক্ষাৎ। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এতে বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা হবে। থাকবে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ, তাইওয়ান ইস্যু, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়।
এ খবর দিয়ে বিবিসি বলছে, এ বছরের শুরুর দিকে এই দুটি দেশের মধ্যবর্তী সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে গোয়েন্দা বেলুন পাঠানোর জন্য চীনকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। এক পর্যায়ে সাউথ ক্যারোলাইনার উপকূলে তা গুলি করে নামায় মার্কিন একটি যুদ্ধজাহাজ।
এছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় চীন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসব চ্যানেল আবার চালু করার বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু দৃশ্যত সে বিষয়ে চীন রাজি হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে লক্ষ্য হলো প্রতিযোগিতার বিষয় ব্যবস্থাপনা করা, যুদ্ধের ঝুঁকি কমানো এবং যোগাযোগের চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত করা। ১১ থেকে ১৭ই নভেম্বর পর্যন্ত সান ফ্রান্সিসকোতে যুক্তরাষ্ট্র আয়োজন করছে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (অ্যাপেক) সামিট। এই সামিট চলাকালে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এতে তাইওয়ান নিয়ে আলোচনা থাকবে চীনের শীর্ষ অগ্রাধিকারে। তারা স্বশাসিত এই দ্বীপরাষ্ট্রটির ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। সেখানে আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হওয়ার কথা।
তাইওয়ানের স্বাধীনতায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না এ মর্মে বাড়তি নিশ্চয়তা দাবি করতে পারেন শি জিনপিং। পক্ষান্তরে তাইওয়ানের চারপাশে বেইজিংয়ের সামরিক তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন বলে মনে করেন একজন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি চীনে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া আলোচনার টেবিলে উঠতে পারে দক্ষিণ চীন ও পূর্ব চায়না সাগর বেইজিংয়ের দাবি করা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা। এসব বাণিজ্যিক ও প্রতিযোগিতার মতবিরোধ ছাড়াও আলোচনায় উঠতে পারে ইরান ইস্যু। ইরানকে বিরত রাখতে চীনের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে অনুরোধ রাখতে পারেন বাইডেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে চীনকে অনুরোধ করতে পারেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই সামিটে সামরিক যোগাযোগ, চীনে তৈরি ফেনটানাইল প্রবাহে বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে বড় অর্জন হতে পারে। তবে কোনো পক্ষই বিস্ময়কর বড় কোনো অর্জন পাবে না, যাতে সম্পর্ক নতুন করে শুরু হবে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ নামের থিংক ট্যাংকের জুড ব্লানচেট বলেন, সম্পর্কের অবনতির জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করে চীন। মার্চে শি জিনপিং পরিষ্কার করেছেন চীনের চারদিকে ঘিরে ফেলছে, নিয়ন্ত্রণ করছে এবং চীনকে দমনপীড়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রাষ্ট্রদূত সি ফেং সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে নেন। এক্ষেত্রে নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জোর দেন। বেইজিং নিশ্চিত হতে চায়, চীনের ব্যবস্থা বদলে দিতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র, নতুন করে একটি শীতল যুদ্ধ চায় না, তাইওয়ানের স্বাধীনতায় সমর্থন দেয় না এবং চীন থেকে ওই ভূখণ্ডকে আলাদা করতে চায় না।
বাইডেন প্রশাসন বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আদর্শের অধীনে চীনের আগ্রাসী ভূমিকাকে শুধু মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। বেলুন নিয়ে সঙ্কটের পর উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য কাজ করেছে তারা। এ জন্য জুন থেকে বেইজিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ তিনজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে পাঠিয়েছে প্রশাসন। তবে গোয়েন্দা বেলুন নিয়ে উত্তেজনার কারণে ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং সফর বাতিল করেন ব্লিঙ্কেন। ওই বেলুন গোয়েন্দাগিরিকে অগ্রহণযোগ এবং দায়িত্বহীন বলে অভিযোগ করেন তিনি।