বেলাব ও মনোহরদী এই দুই উপজেলার মানুষের চলাচল, দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত, কৃষিজ ও ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গাজলী সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ার প্রহর গুনছে সেতুটি। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নে বেলাব – মনোহরদী উপজেলা সীমান্তে এই সেতুটি অবস্থিত। বিকল্প সড়ক না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ পুলেরঘাট (গঙ্গাজলী) সেতু দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করছে। অর্ধশতাধিক বছর পর্যন্ত জনগণকে সেবা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৭২ সালে নির্মিত হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির উপর দিয়ে অটোরিকশা, বিভাটেক, পিক আপ, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, প্রাইবেটকার,মাইক্রোসহ অসংখ্য যান চলাচল করে। ছোট বড় যেকোনো যান সেতুটির উপর উঠলেই কাঁপন ধরে এবং মনে হয় এই বুঝি ধ্বসে পড়বে। সেতুটির মাঝে ফাটল ধরেছে অনেক আগেই, সম্প্রতি রেলিং গুলোও ভেঙে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে সেতুটির মাঝখানে প্লাস্টার উঠে গিয়ে খানাখন্দ, ফাটল ও গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। সেতুটির পিলারের নিম্নভাগের ইট খসে গেছে। মাঝখানের তিনটি পিলারই চরম ক্ষতিগ্রস্ত। সেতুর খুঁটি থেকে ফাটল ও প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। এখন যে কোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়েই হাজার হাজার মানুষ, শত শত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করে। দুই উপজেলার মানুষের নিয়মিত যাতায়াত ছাড়াও পাশ্ববর্তী কাপাসিয়া, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি, বাজিতপুর, অষ্ট্রগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার লোকজন এ সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে। উল্লেখ্য যে, গত কয়েক মাস আগে কয়েকটি দৈনকি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বেলাবো উপজেলার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম সেতুটি পরিদর্শন করে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেতুর উভয় পার্শ্বে দুটি সাইনবোড টানিয়ে দের্ন ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর সেতুটি সংস্কারের জন্য একটি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সেতুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ তো দূরের কথা সাইনবোর্ড টি পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে। ব্রিজ সংলগ্ন ভাবলা গ্রামের (অবঃ) শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, স্বাধীনতার ঠিক পরেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটাকে পুনর্গঠনের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় এ ব্রিজটি করা হয়েছিল। ৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন ব্রিজটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এটি পুননির্মাণ জরুরি। আসাবউদ্দীন খন্দকার বলেন, ব্রিজের বয়স আমার বয়সের চেয়ে ৫/৬ বছর কম হবে। এ ব্রিজটি দীর্ঘদিন যাবত হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহনের একমাত্র ভরসাস্থল। ব্রিজের মাথায় একসময় বাবুর বাজার ছিল। এখানে কয়েক থানার কাঁঠাল বিক্রি হত। ব্রিজের ঘাটে কাঁঠাল বাজার ছিল বলে লোকে একে পুলেরঘাট ব্রিজ বলেও ডাকতো। এটা ভেঙ্গে যাওয়ার পথে। পাটুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইফরানুল হক ভূঁইয়া জামান বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যান চলাচলের এই সেতু মানুষের একমাত্র অবলম্বন। বিকল্প রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে সেতু দিয়ে। আমি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি পুননির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুল হক জানান, আমি ব্রিজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট এ ব্যাপারে জানাব।