২৪ মিনিটের জন্য মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময় কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তাঁর? মৃত্যুর ওপারেও কি জীবন আছে? দ্য মিরর-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন লরেন কানাডে নামে এক নারী। সেইসঙ্গে তিনি প্রচলিত বিশ্বাসকে ভেঙে দিয়েছেন যে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা যায়। এটি প্রায়শই চলচ্চিত্রগুলিতে চিত্রিত করা হয় তবে বাস্তব জীবনের কাছাকাছি-মৃত্যুর অভিজ্ঞতাগুলো বেশ ভিন্ন । বিজ্ঞানীরা অনেক দৃষ্টান্ত নথিভুক্ত করেছেন যেখানে মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং পরে তাদের দেহে জীবন ফিরে এসেছে। বিষয়টিকে বলা হয় ল্যাজারাস প্রভাব বা অটোরেসাসিটেশন । এটি ঘটে যখন কেউ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় কিন্তু হঠাৎ করেই সেই রোগীর দেহে আবার জীবনের লক্ষণ দেখা যায়। কখনও কখনও সিপিআর শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে । এই বিরল ঘটনা এখনও চিকিৎসকদের বিভ্রান্ত করে। বেশিরভাগ লোক যারা এটি অনুভব করে তারা প্রত্যাবর্তনের পরে বেশি দিন বাঁচে না।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ১৯৮২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬৫ টি নথিভুক্ত মামলার মধ্যে, শুধুমাত্র ১৮ জন সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার করেছেন। লরেন কানাডে, যাঁর ২৪ মিনিটের জন্য মৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তিনি রেডডিটে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। লরেন লিখেছেন: আমি গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়িতে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয় – আমার স্বামী ৯১১ নম্বরে কল করে সিপিআর শুরু করেছিলেন। ইএমটিগুলি আমাকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২৪ মিনিট সময় নেয়। আইসিইউতে ৯ দিন থাকার পর, আমাকে অক্ষত” ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এমআরআইতে মস্তিষ্কের কোনো দৃশ্যমান ক্ষতি দেখা যায়নি । লরেন জানিয়েছেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর, ৯১১ নম্বরে কল করলে সেখান থেকে চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে বুঝিয়ে বলেছিলেন এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। কিছুক্ষণ পর জরুরি পরিষেবাও লরেনের বাড়িতে চলে আসে। ২৪ মিনিট পরে আবার লরেনের হৃৎস্পন্দন শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। ২ দিন কোমায় ছিলেন তিনি। জেগে ওঠার পর প্রথমটায় কিছু বুঝতে পারেননি তিনি।
লরেন লিখেছেন : আমি ঘুম থেকে উঠেছিলাম আমি রহঃঁনধঃবফ হওয়ার বিষয়ে খুব বিভ্রান্তিতে ছিলাম এবং আরও কিছু দিন ধরে আমার কোনও স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি ছিল না। ওঈট তে থাকা সপ্তাহের আগে বা বেশিরভাগ সময় আমি স্মৃতি ফিরে পাইনি এবং আমার কাছে বিষয়টা অনেকটা কুয়াশাচ্ছন্নর মতো ছিল । যখন আমার শরীরে প্রাণ ছিল না, তখন আমার মনে আছে আমি ভীষণ শান্তি অনুভব করছিলাম। কোমা থেকে বেরিয়ে আসার পর কয়েক সপ্তাহ এই শান্তি আমার মধ্যে ছিল। দিন এবং সময় ভুলে গিয়েছিলাম। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে কেন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিলো ।
লরেন সেই সময়ে তার অনুভূতিগুলি শেয়ার করে বলেছেন আমি কোনো আলো বা সুড়ঙ্গ দেখতে পাইনি, কিন্তু আমি গভীর শান্তি অনুভব করেছি। মনে হয়েছিলো যেন আমি আমার অফিসের মেঝেতে শুয়ে আছি … বিষয়টা অদ্ভুত কিন্তু সত্য। মনে রাখার মতো আলাদা কিছু না দেখলেও আমি নিশ্চিতভাবে মৃত্যুকে আর ভয় পাই না। তিনি মনে করেন জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে একটি খুব পাতলা রেখা রয়েছে। লরেন এখন আর মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত নন বরং জীবনে প্রায়ই যে ব্যথা অনুভব করেন সেই বিষয়ে বেশি চিন্তিত… সূত্র : দ্য মিরর