গত কয়েক দিন ধরে দেশের একটি বড় অংশে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানীতেও দেখা মিলছে না সূর্যের, কমেছে তাপমাত্রা। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, চর্মরোগসহ ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগ। ফলে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। এরমধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।
গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৭ দিনে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২০টি শিশু। এর মধ্যে মারা গেছে ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছে ২০টি শিশু। তীব্র শীতের কারণে রোগী ভর্তির হার বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
এছাড়া, র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীদের বেশি ভিড় দেখা গেছে। চারটি রুমে একাধিক ডাক্তাররা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন। রুমের ভেতরেও কোনো চেয়ার ফাঁকা নেই। অনেক রোগী দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।এ সময় রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সাধারণত যেসব রোগ দেখা দেয়; সেসব রোগীই তুলনামূলকভাবে বেশি। ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা শীতের কারণে বেড়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে। শীতের কারণে সকাল ৯টার পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
পুরোনো ঢাকার লালবাগ এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব রানা (৫৬) বলেন, ঠান্ডার কারণে কয়েকদিন ধরে কাশি হচ্ছে। কাশের কারণে রাতে ঘুম হয় না। নাক দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে। এ কারণে ডাক্তারের কাছে এসেছি। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করছি। অনেক রোগীর লাইন। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে নাজনীন বেগমের ১১ বছরের মেয়ে নাজমা। শীত আসলেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রতি শীতেই ডাক্তার দেখান। মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে এসেছেন তিনি। থাকেন রাজধানীর পলাশী এলাকায়। মেয়ের সমস্যার কথা বলকে গিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটা অনেকদিন থেকে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। তারপরও গত কয়দিন থেকে শীত বাড়ায় তার কষ্টও বেড়েছে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওলাম, ভালো হয়নি। এজন্য এখানে ভালো ডাক্তার দেখাতে আসলাম।
শীতের মৌসুমে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভোগেন প্রায় সব বয়সী মানুষ। তবে বেশি ভোগেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। ঢাকা মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, আগে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগী আসলেও এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৫০ জনের মতো। ঢামেক জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় হাজারীবাগ থেকে আসা যুবক নিরবের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাবার ঠান্ডার কারণে রাতে শ্বাসকষ্ট হয়। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাইয়েছি। কিন্তু ঠান্ডা ভালো হয়নি। তাই এখানে আসলাম ডাক্তার দেখাতে। শীতজনিত রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, শীতের কারণে শিশু এবং বয়স্কদের নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা বেড়ে যায়। এসময় রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সদের ওপর অনেক চাপ পড়ে। শীত, কুয়াশা, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বায়ু দূষণের কারণে এসব রোগ বেড়ে যায়। এসময় অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরে চলাচল করা উচিৎ। শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে বাবা-মায়েদের। এ ধরনের রোগের সংক্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ হিসেবে মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডা. সিয়াম ভূঁইয়া বলেন, প্রথমতো সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঠান্ডা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি গরম চা, আদা এসব বেশি করে খেতে হবে। গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে জিরা বা জিরার ভর্তাও এসময় বেশ উপকার দেয়। এছাড়া, ধূমপান না করা, মাস্ক পরাসহ ঠান্ডা লাগতে পারে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা কমবে।
তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত রাজধানীর জনজীবন। দেশের উত্তরা লের অবস্থা আরও খারাপ। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিনের বেলা এবং সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জেঁকে বসছে। কুয়াশার কারণে প্রায়ই সূর্যের দেখা মেলে না। রাজধানীসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেও বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের কয়েকটি অ লে আবারও শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বর্তমান আবহাওয়া বিষয়ে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, আগামী এক সপ্তাহ দেশের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। আগামী সপ্তাহে দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে।- রাইজিংবিডি.কম