নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বিএনপি ও টিআইবির ভাষা মিলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ১৭ জানুয়ারি টিআইবির একটি রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। টিআইবি সবসময় গবেষণালব্ধ রিপোর্ট বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টিআইবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা না করে কিছু শ্যালো বিষয়, কিছু পত্রিকার রিপোর্ট এবং তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটাও আমার কাছে সেরকমই মনে হয়েছে। দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেই নির্বাচনের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ওআইসিভুক্ত দেশ থেকে যারা এসেছিল, সার্কভুক্ত দেশ থেকে যারা এসেছিল, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ থেকে যারা এসেছিল, আরব দেশগুলো থেকে যারা এসেছিল, আরও অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষক। যারা পর্যবেক্ষক এসেছিল সেখানে মার্কিন সাবেক কংগ্রেসম্যান ছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক ইউরোপীয়ান সংসদ সদস্যও ছিল। তারা সবাই প্রেস কনফারেন্স করে এ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর সবাই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। বিশ্বের শক্তিধর দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। সেই প্রেক্ষাপটে এ রিপোর্ট (টিআইবি রিপোর্ট) আসলে কারো পক্ষের হয়ে দেওয়া সেই প্রশ্ন রেখেছে অনেকে। কারণ বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী আহমেদ প্রতিদিনি সংবাদ সম্মেলন করে যে কথাগুলো বলেন সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে গতকাল টিআইবি পরিবেশন করেছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। সেজন্য বিএনপিসহ যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, প্রতিহত করতে চেয়েছে, প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এখনও প্রয়াস চালাচ্ছে তাদের মুখে অস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনেকে বলছেন।
যেভাবে নির্বাচন কমিশন কঠোরভাবে ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে সেটির বিন্দুমাত্র প্রশংসা টিআইবির রিপোর্টে নেই বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে সেটিকে ম্লান করতে টিআইবি রিপোর্ট দিয়েছে। টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান দরকার আছে। সিভিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠানগুলো যারা সরকারের ভুলত্রুটি উপস্থাপন করে, সরকারের সমালোচনা করে আমরা সেগুলোকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিটাই লালন করি। কিন্তু যখন রিপোর্ট যায় কারো পক্ষ হয়ে বা উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত তখন সেটি রাষ্ট্র, সমাজ ও সরকার কারো উপকারে আসে না। সেটি বিশেষ কোন গোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ায়। টিআইবি যেন বিশেষ কোন গোষ্ঠী কিংবা নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী কোন শক্তির মুখপাত্র না হয় সেটিই আমরা প্রত্যাশা ও কামনা।
টিআইবিকে কোনো নোটিশ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আশা করবো টিআইবি নিজেরা নিজেদের সংগঠনের যে মর্যাদা, সংগঠন সম্পর্কে যে ধারণা মানুষ আগে পোষণ করত সেখান থেকে সরে এসে কারো মুখপাত্র যেন না হয় এবং নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ না করে সেটি আমাদের কামনা।