টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকের মুখে। হলুদ রংয়ের সরিষা ফুলের মৌ মৌ ঘ্রান ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সরিষা ক্ষেতে হলুদের সমারোহে মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। চমৎকার ওই দৃশ্য প্রাণভরে উপভোগ করতে সেখানে বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভীড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালপুর উপজেলায় আগের বছর সরিষার ভাল ফলন হওয়ায় এবারও কম খরচে বেশী ফলনের আশায় আমন ধান গোলায় তুলেই কৃষকরা মনোযোগ দিয়েছে সরিষা চাষে। এমনকি হেমন্তের শেষের দিকে এসেও পতিত জমিতে সরিষার বীজ বুননে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় চাষীদের।
বাম্পার ফলনও হয়েছে। কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। কিছু দিন পর এই শষ্য ঘরে তুলতে পারবেন। কারণ সরিষা গাছের সবুজের ডগায় ডগায় হলুদ রঙ এর ফুল ফুটেছে। মনমাতানো সরষে ফুল দুলছে মৃদু হাওয়ায় । গাঢ় হলুদ বর্ণের এই ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি।
দুর থেকে মনে হয় সবুজ শ্যামলের মাঠে হলুদের চাদর বিছিয়ে রেখেছে কোন প্রকৃতি প্রেমী। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সরষের এই ক্ষেত প্রকৃতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখতে আর সরষে ফুলের ঘ্রাণ নিতে এবং মনোরাম এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে সরষে ক্ষেতে প্রতিনিয়ত ভীড় করছে প্রকৃতি প্রেমীরা।
সরষে চাষী কা ন আলীসহ বেশকয়েকজন কৃষক বাসসকে বলেন, গত বছর সরিষার ভাল ফলন হয়েছে। তাই এবারও সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে সরকারি প্রণোদনায় ভাল বীজ ও সার পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা আমাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আমাদেরকে হাতে কলমে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেভাবে জমিতে সরষে ফুল ফুটেছে তাতে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। কেননা গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া বেশী অনুকূলে রয়েছে।
সরিষা ক্ষেত দেখতে আসা দর্শনার্থী সবুজ হাওলাদার ও তপন দাস বলেন, ছয় ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ, সবসময়ই অপরূপ। ফুল-ফলের রূপসী বাংলা প্রকৃতির সাজে সাজার পাশাপাশি আমাদের নানা প্রয়োজন মেটায়। চলতি শীত মৌসুমে মাঠে মাঠে সবুজের ডগায় সরষে ফুলের সমারোহ। মৌ মৌ ঘ্রাণ আর বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি এবং মুধু আহরণকারী পাখির গুঞ্জনে মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ফুলের সৌন্দর্য্য আর সুবাস নিতে সরষে ক্ষেতে এসেছি। এই সময়টুকু স্মরণীয় করে রাখতে ছবিও তুলেছি। সরিষা একটি লাভবান ফসল। কম খরচে বেশী লাভবান হওয়া যায়। তাই বেশী বেশী সরিষার চাষ করা উচিৎ।
গোপালপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষার উৎপাদন হয় আলমননগর, মির্জাপুর ও হেমনগর ইউনিয়নে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, সরিষা লাভজনক পেশা। কৃষকরা সরিষার আবাদ বেশি করলে সোয়াবিন তেলের উপর নির্ভরতা কমে আসবে।
গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমা আক্তার বলেন, সরষে একটি লাভজনক ফসল। গত বছর উপজেলায় ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছিল। ফলন ভাল হওয়ায় এবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে কৃষকেরা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এক একর জমিতে ৩ থেকে ৪ মন সরিষা পাওয়া যাবে। এক কেজি সরিষা থেকে ৩৫০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে কৃষকদের সার ও বীজ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। মাঠে ময়দানে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।