ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় এবং ঘণ্টাখানেক কথা-বার্তা বলেছেন গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং তার নিকটতম পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী।
গতকাল রোববার (২১ জানুয়ারী) বেলা ১২টায় রংপুর মহানগরীর পৈত্রিক নিবাস স্কাইভিউতে এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। এ সময় তার সাথে ছিলেন দলটির কো চেয়ারম্যান সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফী, জিএম কাদেরের পিএস আডভোকেট আবু তৈয়ব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লোকমান হোসেন, হাসানুজ্জামান নাজিম, জাহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বেলা ১১টায় সাদা রংয়ের বিলাসবহুল টয়োটা সিএইসআর (ঢাকা মেট্রো-ঘ -১২-০০৫১) কারে ( নিউ ব্র্যান্ড) স্কাইভিউতে আসেন পরাজিত প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রাণী। এসেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জি এম কাদেরকে। পরে ড্রয়িংরুমে এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেন তারা। এ সময় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। উঠে আসে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি।
সাক্ষাত শেষে বাইরে বেরিয়ে এসে উচ্ছ্বসিত আনোয়ারা ইসলাম রাণী বলেন,‘আমি এসেছি আমাদের নব নির্বাচিত এমপি মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে। আমি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। আমি তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর কারণ হলো রাজনৈতিক শিষ্টাচারটা এরকমই হওয়া উচিৎ। যে একজন আরেকজনকে সম্মান করবে। কাছে থাকবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। যেন সকলেই একত্রিত হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। এই কামনায় আমি এসেছি। ওনারাও আমাকে ডেকেছিলেন। সৌজন্য সাক্ষাত হলো। কিছু কথা হলো। আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন। আমাদের পাশে থাকতে চাইলেন।’
জাতীয় পার্টি রংপুরের মানুষের ঋণ পরিশোধ করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাণী আরো জানান,‘আমিও আশা করছি সেহেতু জাতীয় পার্টি ৯০-এর পর থেকে রংপুরবাসীর কাছে ঋণি হয়ে আছে। রংপুরবাসী জাতীয় পার্টিকে অনেক দিয়ে গেছে। আমি আশা করবো এই ৫ বছরে যেন ওনারা রংপুরবাসীর ঋণ শোধ করার চেস্টা করে, রংপুরবাসির ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে। রংপুরের উন্নয়ন নিয়ে যেন কাজ করে। এরকম আমি আশা করছি আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য মহোদয়ের কাছে।’
সকল রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ ধরনেরর শিষ্টাচার অন্তরে ধারণ করে রাখা উচিৎ দাবি করে রানী জানান,‘ফলাফল তো আমি মেনে নিয়েছি। এটা আমার মন থেকে অনুপ্রেরণা জেগেছে তাকে আমি ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবো। তার কাছে যাবো। এটা দেখে আরো দশজন শিখবে, শিক্ষাটা গ্রহণ করবে। সেখান থেকেই আমার মনের মধ্যে এই চিন্তভাবনাটা উদয় হয়েছে। যে ওনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো উচিৎ। অন্তত আমি জানালে বিষয়টা একটু অন্যরকম হবে। মানুষ এটি ভালোচোখে দেখবে। সকলেই গ্রহণ করবে বিষয়টা। আমি মনে করি এটা সকলের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিৎ। সকল রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ ধরনের শিষ্টাচার অন্তরে ধারণ করে রাখা উচিৎ। তাহলে আর এত দ্বন্দ্ব, হাঙ্গামা, লড়াই থাকবে না। সকলে মিলে যদি আমরা একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করতে পারি। একটা সুন্দর রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি। তাহলে আগামী দিনের জন্য আমাদের বাংলাদেশ একটি সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি হবে, এমনটাই আমি আশা করি।’
সৌজন্যতা বিনিময় প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন,‘এবারের নির্বাচনে আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে রাণী। ভালো ভোট পেয়েছে। আজকে আমি তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম। আমিই তাকে আমার সাথে দেখা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণভাবে তার সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাতটি হয়েছে। তার কথা আমি শুনলাম। তার স্বপ্ন শুনলাম। এবং আমি তাকে আশ্বাস দিয়েছি। তার স্বপ্নপূরণে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আমাদের সমস্তক্ষেত্রে যেন মুল ধারার সাথে কাজ করতে পারে। সমানভাবে সম অধিকার লাভ করতে পারে। এবং সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। তার জন্য সে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তার এই সংগ্রামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তার এই কাজে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’জাতীয় পার্টির জন্য রংপুরের লোকের ঋণ শোধ করা কঠিন উল্লেখ বেরে জিএম কাদের বলেণ,‘রংপুরের লোকের ঋণ শোধ করা আমাদের পক্ষে সত্যিই কঠিন। এবং ঋণ শোধের জন্য বড় উপলক্ষই ছিল আমার রংপুরের এমপি হওয়ার। আমার জীবনের একটা প্রান্তে এসে যদি আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি। সেজন্য আমি সর্বদাই চেষ্টা করে যাবো। এটা সার্বক্ষণিকভাবে আমি আমার অন্তরে এটা লালন করি। এবং আমাদের দলও এটা লালন করে। জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব রক্ষায় রংপুরবাসীর আছে অন্যান্য ভূমিকা, অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে।’
জিএম কাদের বলেন,‘ভবিষ্যতে আমরা আশা করছি, একটা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি। একা সুশাসনের রাজনীতি। সুশাসনের জন্য মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেজন্যই মানুষ বিভিন্ন ধরণের দল করে। রাজনীতি করে। সেখানে জাতীয় পার্টি আমরা অতীত ঐতিহ্যে সুশাসন দিতে সেসক্ষম হয়েছি। মানুষ সেই অতীত ঐতিহ্য মনে রেখেছে। অনেকে এখনো সেই দিনের কথা স্মরণ করে। আবার সেই সোনালী দিন ফিরে আসুক, সেই আশা করে। জাতীয় পার্টি সেই প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।‘ গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ৮১ হাজার ৮৬১ ভোট পেয়ে রংপুর-৩ আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তার ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী।