বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ অপরাহ্ন

শিমের রাজ্য সীতাকুন্ডে বাম্পার ফলনে লাভবান চাষিরা

খাইরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম) সীতাকুন্ড
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৪
সীতাকুন্ডে কৃষি জমির আলে কিংবা পুকুর-খালের পাড়েও শিম আর শিম। শিমের রাজ্যে দখলে রয়েছে বেড়িবাঁধ আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশও। স্থানীয় কাঁচা বাজারগুলো এখন অনেক‘টা পরিপক্ক সবুজ শিম আর বিচির দখলে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবার শিম চাষে প্রচুর লাভবান হবেন উপজেলার চাষিরা। লইট্যা, বাইট্যা, পুঁটি ও ছুরি এ ৪ জাতের শিমের চাষ করেন চাষিরা। তবে লইট্যা শিমের ফলন অনেক‘টা বেশি হয়ে থাকে। উপজেলায় সর্বাধিক শিম উৎপাদন হয় পৌরসদরস্থ উত্তরে নুনাছড়া থেকে দক্ষিণে ফকিরহাট পর্যন্ত। চাষিরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ক্ষেতের শিম তুলে বিক্রির জন্য হাট-বাজারে নিয়ে আসছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় এবার সীতাকুন্ডে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার প্রায় ৯০ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু‘ধার, বসত বাড়ির আঙ্গিনা ও পাহাড়ি এলাকা‘সহ শিম চাষ করে আরো ৫ হাজার মে. টনের অধিক উৎপাদন হয়। যার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই। পৌরসদরের ৬নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মহাদেবপুরস্থ হাসান গোমস্তা পাড়া এলাকার চাষি মো. সফিউল আলম বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসের শুরুতেই দু‘একর উচু জমিতে শিমের বীজ বপণ করেন তিনি। মাত্র ৪০ দিনের মাথায় শিম পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা কাঁচা শিম বাজারে বিক্রি করে দারূণ খুশি এ চাষি আরো বলেন শিম চাষ করে আমরা প্রতিবছর লাভবান হচ্ছি। একই এলাকার পাশ্ববর্তী জমির চাষি মোঃ আলমগীর বুরহান বলেন শিম চাষে মাত্র ৩ মাস সময় দিয়ে ভালো আয় করা সম্ভব। তার দু’একর জমিতে প্রতিটি শিম গাছে বাঁশের খুঁটি দেয়া, কীটনাশক, ঔষধ ও লেবার খরচ বাদে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মত মুনাফা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, মৌসুমের শুরুতে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শিম গাছের অসংখ্য ফুল ঝরে পড়ে যায়। তাতে সবুজ শিমের উপর কালচে এক ধরনের দাগ পড়ে গেছে।
তা না হলে এবার ফলন আরো ভালো হত। সীতাকুন্ড কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন রাজু বলেন, এখানকার মাটি শিম চাষের জন্য দারূণ উপযোগী। সীতাকুন্ড কাঁচা বাজারে দক্ষিণ মহাদেবপুর এর হাসান গোমস্তা পাড়ার এলাকার সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন ‘কাত্তি কোটা’ আর ‘ছুরি’ এ দু‘জাতের শিমই বেশি বিক্রি হয় বাজারে। এ শিম একটি লালছে, অন্যটি সবুজ-সাদা লম্বাটে। সীতাকুন্ডে উৎপাদিত শিম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশের মাটিতেও রপ্তানি হচ্ছে। বাল্য বয়সে দেখেছি শিম লাগানো হতো বসত বাড়ির আঙ্গিনায় আর জমিতে হত ধান চাষ। এখন শিমের চাহিদা ও ফলন বেড়েছে বলে জমি, ভিটা, রাস্তা, খাল কিছুই বাদ নেই। চাহিদা বেশি হওয়ায় যেখানেই সুযোগ মিলছে সেখানেই শিম গাছ লাগাচ্ছেন অনায়াসে। তবে সমস্যা হচ্ছে, যত বেশি চাষাবাদ হচ্ছে শিমগাছে আসছে নতুন নতুন রোগব্যাধিও। অনেক সময় ঔষধেও কাজ করছে না। সার-কীটনাশক বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নিম্নমান ও নকল কীটনাশকে বাজার সয়লাব হয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি চাষিদের সঠিক মাত্রাজ্ঞান না থাকায় ঔষধের প্রয়োগও ঠিক মতো হচ্ছে না। অনেক সময় একটি ঔষধ প্রয়োগের পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করে আরেক‘টি ঔষধ প্রয়োগের ঘটনাও রয়েছে। যা ফসলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। সীতাকুন্ড কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ি ফয়সাল বাণিজ্যালয় এর স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান (শাহিন) বলেন, শিমের রাজ্য সীতাকুন্ড। এখানকার শিমের রং, রূপ আর স্বাদ বরাবরই আলাদা। দেশজুড়ে রয়েছে এখানকার শিমের আলাদা কদর। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শিম রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। আর খাদ্য তালিকায় শিমের নানা পদ ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে সবজি, ভর্তা, ভাজি, খাইস্যা (বিচি), ডাল, পোড়া শুকনো বিচি ইত্যাদি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, এখানের মাটি শিম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তবে কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শিমের গুণাগুণ কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। শিম চাষিদের এ ব্যাপারে কৃষিবিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com