টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারের মাটিতে ব্রাজিলের সুস্বাদু ফল বাংলাদেশে দুর্লভ জাবাটিকাবা। দেখতে অনেকটা আঙ্গুরের মতো হলেও ওষুধি গুণে ভরা ব্রাজিলের এই সুস্বাদু ফলটি। এখন কার আবহাওয়া ও জলবায়ু এই ফল চাষে উপযোগি বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ বলছে, পরিপক্ক জাবাটিকাবা ফলের রং থাকে সবুজ আর পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। খাওয়ার যোগ্য হতে সময় লাগে ১ থেকে দেড় মাস। বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় এই ফলের আবাদ বাড়লে একদিন কৃষি অর্থনীতিতে আবদান রাখতে সক্ষম হবে এই জাপাটিকাবা। জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ সেন্টারের ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নত ফলের জাত সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে এ জাতটি নিয়ে আসে। বর্তমানে ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যানে চাষ হচ্ছে জাপাটিকাবা। ধনবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল বলেন, আমাদের সেন্টারে ব্রাজিল থেকে জাবাটিকাবা চারাটি আনা হয়। বর্তমানে সেন্টারে ১ টি জাবাটিকাবা গাছ রয়েছে। ১ টির মধ্যে প্রচুর ফল হয় আর ১ বছরে তিন বার ফল পাওয়া যায় গাছগুলো থেকে। এই গাছটি থেকে বংশ বিস্তারের প্রস্তুতি চলছে। জাবাটিকাবা গাছের ফলন দেখে চাষিরা এই ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন এবং ধীরে ধীরে এই চারা লাগাতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ধনবাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাধারণত সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিলন বলেন, জাপাটিকাবা গাছ আমার দেখা প্রথম এমন একটি গাছ, এর সবখানেই ফলে ভরপুর। এমন সুমিষ্ট আর নয়নাভিরাম ফল দেখে যে কারো মন ভরে যাবে। আমি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামীতে আমার বাগানে এই চারা রোপণ করে ভালো ফল পাব। মোঃ রাসেল পারভেজ তমাল আরো বলেন, জাবাটিকাবা ব্রাজিলে আঙ্গুর হিসাবে পরিচিত। এটা ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। এটা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। এই গাছ কিছুটা খরা সহিষ্ণু। এ গাছের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করা গেলে পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। জাবাটিকাবা আরও কয়েকটি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যায় উরুগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, উত্তর-পূর্ব আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে। এই ফলের গাছটি গড়ে ১০ থেকে ১৫ ফুটও বাড়ে। খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বীজ রোপণের পর থেকে ফল উৎপাদন করতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় নেয়। তবে ফলন্ত গাছের গুটি কলমের চারা রোপণ করলে ফল ধরতে সময় নেয় দুই বছর। গবেষকদের মতে, ব্রাজিলের মিনাস গেরেইস অঞ্চলে জাবুতিকাবার উৎপত্তি হয়। ১৯৯৪ সালের দিকে জাবুতিকাবা প্রথম আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সান্তা বারবারায় চাষ হয়। বর্তমানে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো ও সান জোসে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় এই ফলটির চাষ হচ্ছে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, জাবাটিকাবা এর পুষ্টিগুণ অনেক। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পেন্টাটিন, আয়রন, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই ও বি রয়েছে। ভরপুর রয়েছে ভিটামিন সি-এ। এছাড়া রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদানও।