বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

গাজা যুদ্ধ : সদ্যজাত ২১৪ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫

গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এই সময়ের মধ্যে জন্ম নেয়া ২১৪ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া অপুষ্টির কারণে আরো ৪৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় কাতার-ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের উল্লেখিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী দুই হাজার ৯২ ফিলিস্তিনি পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করেছে। এক হাজার ১১৫ মেডিক্যাল স্টাফ, ৯৪ সিভিল ডিফেন্স কর্মচারী ও ২০৫ সাংবাদিক ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এছাড়া সাত শিশুসহ আটজন তাদের তাঁবুতে প্রচ- ঠান্ডা আবহাওয়ায় মারা গেছে। নিহতদের ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।
পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি হামলায় অঙ্গহানি হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফিলিস্তিনির, যাদের ১৮ ভাগ শিশু। এছাড়া অপুষ্টি ও খাদ্যের অভাবে সাড়ে তিন হাজার শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ১২ হাজার ৭০০ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। সাড়ে ১২ হাজার ক্যান্সার রোগী মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিন হাজার রোগীর বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবার অভাবে ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
গাজার মিডিয়া অফিস জানায়, স্থানচ্যুতির কারণে সংক্রামক রোগে ২১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ জন এবং হেপাটাইটিস বি-তে ৭১ হাজার ৩৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। ওষুধ প্রবেশে ইসরাইলি বাহিনী বাধা দেয়ায় সাড়ে তিন লাখ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইসরাইলি হামলায় গাজার ৮৮ ভাগ ধ্বংস হয়েছে এবং প্রাথমিক প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে মিডিয়া অফিস।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ফিরছে ‘ভুতুড়ে শহরে’: দীর্ঘ সময় পরে নিজ শহরে ফিরছে গাজার বাসিন্দারা। ইসরাইলি হামলায় তাদের এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, সেখানে নেই পানি, বিদ্যুৎ বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
বাড়ি যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি হুসেইন বারাকা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতির সময় একটি তাঁবু স্থাপন করতে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। এটি একটি ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। পানি নেই, কিছুই নেই। এমনকি এমন কোনো স্তর নেই যেখানে আপনি থাকতে পারবেন।’ এলাকায় বাড়ি ধ্বংস হওয়া মোহাম্মদ আল-বাল্লাস যোগ করেন, ‘এখানে জীবনের প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস নেই। আপনি যদি এখানে একটি প্রাণী রাখার চেষ্টা করেন তবে এটি বাঁচবে না। সূত্র : আল জাজিরা
গাজায় প্রতিটি সড়কে পড়ে আছে লাশ, উদ্ধার আরো ৬৬: হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার গাজাবাসী তাদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। এলাকায় ফেরার পরেই চলছে উদ্ধার অভিযান। উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে যেয়ে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ও প্রতিটি সড়কে পড়ে আছে লাশ।
গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরো ৬৬টি লাশ উদ্ধার করেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর ও ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তারা এ লাশ উদ্ধার করেছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ আরো জানিয়েছে, ৫৮টি লাশ দক্ষিণ গাজায় এবং আটটি উত্তরে পাওয়া গেছে।
ভারী বোমাবর্ষণ ও লাশগুলো কয়েক মাস ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকার কারণে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগ। এদিকে বিবিসির ইংরেজির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উদ্ধারকারীরা ধ্বংসের পরিমাণ বিবেচনা করতে যেয়ে দেখেছেন, গাজায় প্রতিটি সড়কে লাশ পড়ে আছে। উদ্ধারকারী সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বিবিসিকে বলেছেন, তারা ১০০ দিনের মধ্যে লাশ উদ্ধার করার আশা করছেন। তবে বুলডোজার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে তা বিলম্বিত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইসরাইলি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ১১ হাজার ৯১ ফিলিস্তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের সংখ্যা আরো বেশি। এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারায় সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসাথে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)। ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
সূত্র : আল-জাজিরা ও বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com