বছরের পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম। দুই ঈদের দিন এবং ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদের পরের তিন দিন। আর মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। এ ছাড়া বছরের বাকি দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা যায়।
সাপ্তাহিক নফল রোজা:নবীজি (সা.) সোমবার আর বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এই দুই দিনের রোজার বিশেষ ফজিলত হাদিসের কিতাবগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি, আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)
সোমবারের রোজা সম্পর্কে আরেকটি হাদিস আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে। নবীজি (সা.)-কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেছিলেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
মাসিক নফল রোজা:প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার বিশেষ ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় এই দিনগুলোকে ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়। বিজ শব্দের অর্থ সাদা বা পরিষ্কার। এই দিনগুলোতে যেহেতু চাঁদের আলোয় পৃথিবী আলোকিত থাকে, ঝলমল করে; এ জন্য দিনগুলোকে আইয়ামে বিজ বলা হয়। আবুু জর (রা.)-কে নবীজি (সা.) বলেছেন, তুমি যদি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তাহলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখো। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৬১)
এ ছাড়া মাসের যেকোনো তিন দিন রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব হবে মর্মেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৬২)
বার্ষিক নফল রোজা: বছরের মোট তিন সময়ে বিশেষভাবে রোজা রাখা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর আমল থেকে পাওয়া যায়। এর একটা হলো শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৯)
আরেকটি হলো আরাফার দিনের রোজা। আরাফার দিন হলো জিলহজের ৯ তারিখ, কোরবানি ঈদের আগের দিন। এই দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, যে আরাফার দিনে রোজা রাখল, আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি, আল্লাহ তাআলা তার আগের এক বছর এবং পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৯)
আরেকটি হলো আশুরার দিনের রোজা। আশুরা হলো মহররমের ১০ তারিখ। এই দিনের রোজা সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন রোজা রাখল, আমি আশা করি আল্লাহ তাআলা তার আগের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫২)
যুবকদের বিশেষ রোজা: যুবকদের জন্য রাসুলে করিম (সা.) এক বিশেষ রোজার কথা বলেছেন। যে যুবকের বিবাহের বয়স হয়ে গেছে অথচ তার কাছে বিবাহের জন্য টাকা-কড়ি নেই, তাকে নবীজি (সা.) নফল রোজার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আমরা বের হলাম। আমরা ছিলাম কতিপয় যুবক। আমাদের কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য কর্তব্য হলো বিবাহ করে নেওয়া। কারণ বিবাহ চক্ষু অবনত রাখার এবং লজ্জাস্থান হেফাজত রাখার ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক। তবে তোমাদের মধ্যে যার বিবাহের সামর্থ্য নেই, তার উচিত রোজা পালন করা। কেননা রোজা যৌন চাহিদাকে অবদমিত করে রাখে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮১)