দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। বেওয়ারিশ এসব কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটারের সেন্টমার্টিনে আনুমানিক ৮ হাজার কুকুর রয়েছে বলে দাবি করেছেন সেন্টমার্টিন বিচ ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন শুভ।
তিনি বলেন, এসব কুকুর প্রতিদিন কাউকে না কাউকে কামড়াচ্ছে। ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো স্থানীয় কিংবা পর্যটক কাউকেই ছাড় দিচ্ছেনা। রাতে বা সকালে বিচে নামলে বেশিরভাগ লোকজনকে কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কুকুরের আক্রমণের ভয়ে ইতোমধ্যে অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের স্কুল-মাদ্রাসায় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে সেন্টমার্টেনে বেড়াতে আসা শরাফত মিয়া ও সাজেদা পারভীন দম্পতি বলেন, তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর থেকে দলে দলে কুকুর দেখেছেন। জেটিঘাট থেকে নামার পরেই ৭/৮ টি কুকুরের দল তাদের পিছু পিছু অনেকদূর যায়।
স্ত্রী সাজেদা পারভীন বলেন, আমি কুকুরকে ভীষণ ভয় পাই। কুকুর যখন আমাদের পিছু নিয়েছিলো তখনও অনেক ভয়ে ছিলাম। পরে শরাফত কাঠ দিয়ে কুকুরগুলো তাড়িয়ে দেয়।
বগুড়ার গাবতলীর বজলুর রশীদ বলেন, আমার বাচ্চারা সমুদ্রে নাস্তা ও চিপসের প্যাকেট হাতে হাঁটছিলো। এমন সময় পেছন থেকে ৩/৪ টা কুকুর এসে তাদের হাত থেকে নাস্তা ও চিপসের প্যাকেটে কেড়ে নেয়। বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আমি ধাওয়া করতে গেলে উল্টো কুকুরগুলো কামড় দিতে তেড়ে আসে।
তিনি বলেন, এতো সুন্দর পর্যটন স্পটে যদি এভাবে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যায়; অথচ কোনো সমাধান না হয়, তাহলে পর্যটকরা এখানে বেড়াতে আসতে অনীহা প্রকাশ করবে। সেন্টমার্টিন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কাশেম বলেন, কুকুরের বংশবিস্তার বেশি হওয়ায় কুকুরের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ। একটি মাদী কুকুর বছরে ৩ থেকে ৪টির অধিক বাচ্চা দেয়। সেন্টমার্টিনে কুকুর বেশি হওয়ায় বংশবৃদ্ধিতে এভাবে সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। অপরদিকে দ্বীপটিতে ৫ হাজারের অধিক কুকুর রয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর উপদ্রব ও আক্রমণে পর্যটক এবং স্থানীয় লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দ্বীপে কুকুরের সংখ্যা ও আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সচিব এবং জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু কুকুর নিধনে তেমন কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। তবে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত দুয়েকবার জন্মনিরোধক ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিলো। তারপরও কুকুরের সংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এতে পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় বেওয়ারিশ এসব কুকুর নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি বলে মনে করছেন এই জনপ্রতিনিধি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সেন্টমার্টিনের কুকুরগুলো যাতে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। কুকুরের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।