শিবচরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পিকনিকে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের একটি মদের বোতল থেকে মদ্য জাতীয় পানীয় পান করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে অভিভাবকদের। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ওয়ালিদের সামনে বোতল নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে এক শিক্ষার্থীকে। মদ ঢেলে পান ও উল্লাস করার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি ভিডিও দেখে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে এমন ঘটনা। বিদ্যালয় থেকে গত শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে যায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে মদ্যপানের এ ঘটনা ঘটে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪১ জন শিক্ষার্থী ও ১৬ জন শিক্ষক গত শনিবার সকালে শিক্ষা সফরের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মদ্য পান করতে দেখা যায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ওয়ালিদের পাশে একজনের হাতে একটি বিদেশী মদের বোতল। মদ ঢালার চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়াও মদের বোতল হাতে শিক্ষার্থীদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। গানের তালে তালে নাচছে শিক্ষার্থীরা। বাসের মধ্যে একাধিক মদের বোতল ছিল বলে জানা গেছে। বাস ছাড়ার পর মদ পানের এ ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের সাথে মদ জাতীয় ‘পানীয়’ পান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষা সফরে আমার মেয়েও গিয়েছিল। আমরা অভিভাবকরা যেতে চেয়েছিলাম। আমাদের নেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন শিক্ষা সফরে যদি এমন কর্মকাণ্ড হলে তো শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, আমার বন্ধুরা শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম। ওরা ভিডিও করে ফেসবুক স্টোরি দিয়েছে। আমি ভিডিওতে দেখেছি, ওরা বিদেশী বোতল থেকে মদ পান করেছে। তবে ওরা স্যার ম্যাডামদের সামনেই খেয়েছে মদ। মদ পান করছে সরোয়ার, রবিউল, মোস্তফা, এদের ভিডিও দেখেছি।’ বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ‘ক্লাস টেনের ছাত্রছাত্রীরা নাচে আর স্যারের হাতে মদের বোতল! বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মো. ওয়ালিদ বলেন, ‘বাসে আমার পরিবার ছিল। আমরা বাসের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই বিষয়টি শুনে বোতলটি নিয়ে আসি। আমি আসলে একা ছিলাম তখন। আর শিক্ষার্থীরা বলেছে, বোতলে মদ ছিল না। বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মিক্সার বানাইছে। আমি ওদের শাসন করেছিলাম। এখন আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন শিকদার বলেন, আমি শুরুতেই বাসে ছিলাম না। আমি আগের দিন ঢাকা গিয়ে অবস্থান করি। ঢাকা থেকেই শিক্ষা সফরে যোগ দেই। এর আগে বাসের মধ্যে কি হয়েছে তা আমি জানি না। দায়িত্বে ছিলেন শিউলি ম্যাডাম। আমি বাসে উঠার পর এমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই। জানতে চাইলে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খাঁন বলেন, ‘শিক্ষা সফরের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মদ খেয়ে নেচেছে বিষয়টি শুনেছি এবং ভিডিও দেখেছি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।