অশ্রুসিক্ত নয়নে আর ভিন্ন আয়োজনে এক শিক্ষাগুরুকে বিদায় দিলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিদায় বেলার এমন ভিন্ন আয়োজন সচরাচর দেখা মেলেনা। ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ী আর ফুলের মালা গলায় পড়িয়ে, গাড়ীতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শিক্ষাগুরুকে বিদায় জানানোর এ আয়োজন দেখা মেলে ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউপির পশ্চিম আন্দার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আন্দার মানিক এলাকায় দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারী অবসরে যান সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমান। আজ ৪ মার্চ (সোমবার) সকালে তাঁকে বিদায় জানাতে ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনসাধারণের এ ভিন্ন ধর্মী আয়োজন। ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার উত্তর ধলিয়া গ্রামের সৈয়দুর রহমানের ছেলে শিক্ষক শফিকুর রহমান ১৯৮৬ সালে সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন পশ্চিম আন্দার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে আন্দার মানিক গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে লজিং (জায়গীর) থেকে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবি ও ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী। শিক্ষককে বিদায় দিতে আসা স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, স্যার ভাল শিক্ষক ছিলেন, সে সাথে খুব ভাল মানুষও ছিলেন। তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় আমাদের এলাকায় কাটিয়েছেন। কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ তো নয়ই, মনোমালিন্য হতে দেখিনি। আমাদের সমাজে ওনার অবদান চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ গাড়ীতে করে স্যারকে ওনার বাড়ী ফেনীতে পৌছে দিয়ে আসব। আমাদের এ আয়োজন ওনার অবদানের কাছে নিতান্তই নগন্য। আমি ওনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। জানতে চাইলে পশ্চিম আন্দার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবদুল মোমেন বলেন, গত কয়েক বছর আগে আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করি। এ কয় বছরে আমি দেখেছি, তিনি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মানুষ। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অসাধারণ ছিলেন। ওনার বিদায় বেলার এ আয়োজন বলে দেয় এলাকার মানুষের কাছে তিনি কতটুকু শ্রদ্ধাভাজন আর প্রিয় ছিলেন। এ বর্ণিল বিদায় সম্বন্ধে অনুভুতি জানতে চাইলে বিদায়ী শিক্ষক শফিকুর রহমান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি জীবনের দীর্ঘ সময় মফস্বল এলাকার এ বিদ্যালয়ে কাটিয়েছি। আমি যখন এ বিদ্যালয়ে যোগদান করি তখন এখানে রাস্তা ঘাট ছিলো না। যোগাযোগের ভাল মাধ্যম ছিল না। তবুও এলাকার মানুষের ভালবাসা আমাকে অন্যত্র চলে যেতে দেয়নি। আজ আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি চাইনি। তাদের এ ভালবাসা আমার আজীবন মনে থাকবে।