শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

দিনাজপুরের লিচু বাগান মুকুলে ছেয়ে গেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪

এবারে দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত লিচু চাষে ফলন অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান মিয়া গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এবারে জেলায় অনুকূল আবহাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় বাম্পার লিচুর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমী জেলায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা শুধু লিচুর বাগান গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া জেলার প্রত্যেকটি বাড়িতে এবং ফাঁকা জায়গায় লিচুর গাছ রয়েছে। এসব লিছুর গাজ সহ লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত লিচুর ফলন অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের লিচু চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, আম লিচুতে ভরপুর জেলা মোদের দিনাজপুর। বসন্তের এ ফাল্গুন মাসে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে জেলার লিচুর বাগান গুলো। সোনালী রঙের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ টানছে গাছের দিকে। ফাল্গুনী হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মুকুলগুলো। যেমনি সৌন্দর্য, তেমনি তার সুঘ্রাণ।
তিনি বলেন, দিনাজপুর সদর উপজেলার এ এলাকার মাছিমপুর, আউলিয়াপুর, উলিপুর, খানপুর, চেরাডাঙ্গীসহ, সদর উপজেলার লিচু বাগানে মুকুলে ভরপুর। অনেক লিচুর বাগানি আগাম লিচুর বাগানের ফল বিক্রি করে দিয়েছে। এর মধ্যই বাগানের ফল ক্রেতারা বাম্পার ফলনের আশায় লিচু গাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন। লিচু গাছে স্প্রে প্রয়োগ, সেচসহ গাছের গোড়ায় ভিটামিন জাতীয় সার দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে।গাছে ফল ধরে রাখতে এসব পরিচর্যায় ব্যস্ত লিচু চাষীরা। গত দুবছর লিচুর ফলের ক্ষতি হওয়ায় এবার ভালো ফল পাওয়ার আশায় আনন্দে উদ্বেলিত লিচু চাষিরা।
ক্ষুদে মৌমাছিরা মধু আহরণে ঝাকে ঝাকে দখল করছে গাছগুলো। আগামী বৈশাখের মাঝামাঝি আগাম জাতের লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। অপেক্ষায় দিন গুনছে লিচু চাষি, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের মানুষ। চাষীদের নিকট থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে লিচু কিনে ব্যবসা করবে এ আশায় তারা বাগান গুরু ঘুরে ঘুরে দেখছেন ।
দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর, বিরলসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাসা-বাড়ি ছাড়াও অনেকে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন লিচু বাগান। তাদের রোপণ করা অধিকাংশ গাছগুলোতে ফুটেছে মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা। দেশি জাতের লিচু কাঁঠালি মাদ্রাজি সোনালী ও বোম্বাই লিচু গাছের ফলন অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব গাছের লিচু মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আসে।দিনাজপুরে ঐতিহ্যবাহী লিচু বেদানা সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও বিরল উপজেলার কয়েকটি গ্রামে চাষ হয়ে থাকে। এই ঐতিহ্যবাহী বেদনা লিচু গাছে প্রচুর পরিমাণ ফলন হয়। তবে এই লিচু জ্যেষ্ঠ মাসে প্রথম থেকে ২০ জ্যেষ্ঠ পর্যন্ত গাছে থাকে । এর মধ্যে বিভিন্ন মহল ও অফিস-আদালত লিচু বাগান থেকেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী ক্রয় করে নিয়ে যায়। অবশিষ্ট লিচু বাজারে ওঠে।
এরপর চায়না টু চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের সুস্বাদু লিচু বাজারে আসে। এসব লিচু খেতে সুস্বাদু ও গ্রাহকের চাহিদা অনেক বেশি। ১৫ জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ়ের ১৫ পর্যন্ত এ জাতীয় লিচু বাজারে পাওয়া যায়। গত দু’বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চায়না ভ্যারাইটি লিচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারে কিছুটা ব্যতিক্রম, চায়না ভ্যারাইটির গাছে লিচুর পর্যন্ত মুকুল দেখা দিয়েছে। চাষীরা ব্যাপক পরিচর্যা করছে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুরে ফল নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরে লিচু গাছগুলোয় গত বছরের তুলনায় এবার আশানুরূপ মুকুল ধরেছে। এসব মুকুল থেকে বেশি পরিমাণ ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গাছগুলোতে ওষুধ প্রয়োগসহ নানামুখী পরিচর্যা গ্রহণ করছেন বাগানীরা। তবে বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, গত বছরে কয়েক দফায়, বেদনা ও চায়না থ্রি লিচু রপ্তানি করা হয়েছে দেশের বাইরে। এর মধ্যে ফ্রান্স আমেরিকা ও ব্রিটেনে যতœ সহকারে লিচুগুলো পৌঁছানো গেছে। এবারে ওই সব দেশে আরো কয়েকটি দেশে দেশের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী লিচু সরবরাহ করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com