প্রায় চারশত বছরের ঐতিহ্য বহন করে আছে শাঁখারী বাজার। রাজধানী পুরান ঢাকার নওয়াবপুর ও ইসলামপুরে সংযোগ স্থলে অবস্থিত বাজারটি। মূলত এই এলাকায় বসবাসকারী শাঁখারীদের নামানুসারে বাজারটির নামকরণ করা হয়। জেমস -ওয়াইজের বর্ণনানুসারে বলা হয়ে থাকে আনুমানিক ১৮৮৩ সনের দিকে ৮৩৫ জন শাঁখারী ঢাকায় বসবাস করে, ধারণা করা হয় রাজা বল্লাল সেনের শাসনামলে শাঁখারীরা পূর্ব -বঙ্গে আগমন করে এবং পরবর্তীতে তারা ঢাকার বিক্রমপুরে শাঁখা ব্যবসায়ের কাজে নিয়োজিত হয়।মোগল শাসনামলে ১৭’শতকে খাজনাবিহীন লাখেরাজ জমি প্রদান করে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং ঐ সময় ঢাকার নবাব সলিমূল্লাহ শাঁখারীদের একটি করে বসতবাড়ি ও শাঁখা তৈরির জন্য অনুদান দিয়ে থাকেন। পরে ১৯৭১ সালে ২৫’শে মার্চ পাকবাহিনী পুরান ঢাকায় হামলা করলে শাঁখারীদের ১০ থেকে ১২ জন মারা যায়,যুদ্ধ চলাকালীন তারা ভারতে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর তারা নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসেন এবং শাঁখা ব্যবসা চালিয়ে যায়।বর্তমানে শাঁখারীদের প্রায় ১৩৬ টি পরিবারে ২৫’হাজার মানুষের বসবাস।একটা সময় ভারতীয় উপমহাদেশে পুরান ঢাকার এ শাখার ব্যাপক খ্যাতি থাকলেও কালের গর্ভে তা হারিয়ে যাচ্ছে,কমেছে শাঁখা তৈরির কারখানা, আগে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি কারখানা ছিল এখন মাত্র ৩ টি কারখানা রয়েছে। শাঁখা ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের ভারত, শ্রীলংকা থেকে শাঁখা আমদানি করতে হয়, বর্তমানে আগের চেয়ে তার দাম বেড়ে যায় এবং শাঁখা তৈরির কারিগররা আগের মতোআগ্রহ দেখাচ্ছেনা। শাঁখারী বাজার শাঁখা কারিগর সমিতির সভাপতি বলেন,বর্তমানে এটির ঐতিহ্য নেই বললেই চলে, মানুষ এখন শাঁখা ব্যবসার চেয়ে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রিতে ঝুঁকছে।মূলত সনাতন হিন্দু বিবাহিত নারীদের বিয়ের পর ব্যবহৃত এই শাঁখা তৈরি হয় সাদা শঙ্খ থেকে।আর শাঁখারী কারিগররা তাদের দক্ষ নিপুণ হাতে নানা ডিজাইনে এসব শাঁখা তৈরি করে থাকেন।