গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিললেও সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণের। এতে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন সাত হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে গেছে।
সপ্তহজুড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। ছয় সপ্তাহের এই পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৯টির। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। তার আগের চার সপ্তাহে কমে ১১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা, ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো ৭৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তার আগের চার সপ্তাহে কমে ১৪১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ, ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ৪৩১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচক কমলেও বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৬ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
প্রধান মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৮০৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে গোল্ডেন সনের শেয়ার। দৈনিক গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বেস্ট হোল্ডিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ইনফিউশন, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, লাভেলো আইসক্রিম এবং এস এস স্টিল।