ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ একটি ইবাদত। দ্বিতীয় হিজরি বর্ষের বদরের বিজয়ের ১৩ দিন পর পয়লা শাওয়াল প্রথম ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ উদ্যাপন করা হয়। একই বছর মদিনার সুদখোর মহাজন বনু কাইনুকা সম্প্রদায়কে নিরস্ত্র করার পর ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা—কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। নবীজি (সা.) বলেন, প্রত্যেক জাতির উৎসব আছে, আমাদের উৎসব হলো এই দুই ঈদ। (মুসলিম, তিরমিজি)। মুসলমানদের ধর্মীয় দুটি উৎসব—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ঈদের সঙ্গে নতুন চাঁদের নিবিড় সম্পর্ক। ‘হিলাল’ অর্থ নতুন চাঁদ, যা বাংলায় ‘হেলাল’। হিলাল ১ থেকে ৩ তারিখের চাঁদ। ‘হেলাল কমিটি’ মানে চন্দ্র কমিটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোধজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। প্রতিটি মাসের চাঁদরাত গুরুত্বপূর্ণ। আরবি চান্দ্রবৎসরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল। রমজানের রোজার শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ।
শাওয়ালের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ইসলামে যে রাতগুলো ইবাদতের জন্য এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ, সেসবের অন্যতম এই ঈদের রাত। চাঁদরাতের প্রথম সুন্নাত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া সুন্নাত। (তিরমিজি শরিফ: ৩৪৫১, মুসনাদে ইমাম আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)। ঈদের চাঁদরাত পয়লা শাওয়াল তথা রমজানের ঈদের রাতের আমল হলো মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ যথাসময়ে যথাযথভাবে আদায় করা। রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা; সম্ভব হলে গোসল করা। ইবাদতের উপযোগী ভালো কাপড় পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। মাগরিবের পর আউওয়াবিন নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। রাত জেগে নফল ইবাদত করা। নফল নামাজ পড়া। তাহ্যিয়াতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ, তাওবার নামাজ, সলাতুল হাজাত, সলাতুত তাসবিহ, সলাতুশ শোকর ইত্যাদি পড়া। কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, সুরা ইয়াসিন, সুরা রহমান, সুরা ওয়াকিআ, সুরা মুলক, সুরা মুযযাম্মিল ও সুরা মুদ্দাচ্ছির এবং সুরা ফাৎহ ও সুরা নাবা ইত্যাদি পাঠ করা। দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা।
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী? তারা বলবে, তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা। বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দীরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব। এরপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম। নবীজি (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুতবাতুল আহকাম, ঈদুল ফিতরের খুতবাহ, পৃষ্ঠা: ১৬২-১৬৬)।
ঈদের নামাজ পুরুষদের জন্য ওয়াজিব। ঈদের নামাজের সময় হলো সূর্যোদয়ের পর থেকে মধ্য দিবসের পূর্ব পর্যন্ত। ঈদের নামাজের আগে বা পরে কোনো নফল নামাজ পড়া যায় না। ঈদের নামাজের জন্য আজান ও ইকামাত দিতে হয় না। সাধারণত দিনের প্রথম প্রহরেই ঈদের নামাজ পড়া হয়। রমজানের ঈদ অপেক্ষা কোরবানির ঈদে জামাত একটু আগেই করা হয়। কারণ, তার পরে কোরবানির পশু জবাইসহ নানান কাজ থাকে। রমজানের ঈদের নামাজের আগে এবং কোরবানির ঈদের নামাজের পরে প্রাতরাশ গ্রহণ করা সুন্নাত। ওজর বা অসুবিধার কারণে ঈদের জামাত করতে না পারলে বা জামাতে শামিল হতে না পারলে তা মার্জনীয়। এমতাবস্থায় অন্যান্য আমল যেগুলো পালনে বাধা নেই, তা করতে হবে। (আল ফিকহুল ইসলামি)। দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ ছয়টি অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবিরসহ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবিরে ভুল হলে অর্থাৎ তাকবির কম বা বেশি হলে অথবা বাদ পড়লে সাহু সিজদা প্রয়োজন নেই। তিন প্রকার নামাজে সাহু সিজদা প্রযোজ্য নয়: ঈদের নামাজ, জুমার নামাজ, বড় জামাত। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ফাতাওয়ায়ে শামি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail.com