শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন

মাধবদীতে পাড়া-মহল্লায় সাড়া ফেলেছে গরু সমিতি

আল আমিন (মাধবদী) নরসিংদী
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪

নরসিংদীর মাধবদীতে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যতিক্রমী ‘গোশত সমিতি নামের গরু সমিতি। বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, চাকুরিজিবী, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষেরই দু-একটি করে সমিতি রয়েছে। তারমধ্যে সমসাময়িক সময়ে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মাংস বা গোশত। প্রথমদিকে এ সমিতির কথা শুনে অনেকেই অবাক হলেও বর্তমানে লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। মাধবদী পৌরশহর বা এর আশপাশের গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের গরু সমিতি গঠন করা হয়। গরু সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই বাড়ছে গরু সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি গরু সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দুএকদিন পূর্বেই এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম গরু সমিতি”। অনেকের কাছে গোশত সমিতি বা মাংস সমিতি” নামেও পরিচিত। সারা দিন ভ্যান ও রিকশা চালিয়ে সংসারের ঘানি টানেন মাধবদী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ভিটি পাড়া মহল্লার গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা ও খাবার খরচসহ সব মিলিয়ে তাকে অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সংসার চালাতে হয়। ঈদ এলে সবার কাপড়-চোপড় আর তেল-সেমাই-চিনি কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এ ছাড়া আদরের সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিন গোশত খাওয়ার। কিন্তু রিকশা চালক বাবার ঈদের দিনে সন্তানদের গোশত খাওয়ানোর ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। ইতিপূর্বে ঈদের দিন সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে গত দুই বছর যাবৎ গরু সমিতিতে নাম লেখিয়ে ‘গোশত সমিতি’র সদস্য হয়েছেন দুলাল মিয়া। ভগিরথপুর গ্রামের গরু সমিতির মূল উদ্যোক্তা মো. আলতাফ হোসেন জানান, সমিতিতে এবার ৫০ এর বেশী সদস্য। প্রতিমাসে সদস্য প্রতি ৪০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। অনেকেই একের অধিক নামও লিখিয়েছেন। কেউ ২/৪/৬ নামও দিয়েছেন। বছর শেষে রোজার ঈদের পূর্বে জমানো টাকা দিয়ে গরু কিনে জাবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ বন্টন করে দেওয়া হয়। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি হয়। মাধবদী পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড ছাড়াও এর আশপাশের নুরালাপুর ইউনিয়ন, মেহের পাড়া ইউনিয়ন, শিলমান্দী ইউনিয়ন, মহিষাশুড়া ইউনিয়ন, কাঠালিয়া ইউনিয়ন ও সাতগ্রাম ইউনিয়নের নওপাড়া, ভগিরথপুর, বাহাদুরপুর, চাঁন্দেরপাড়া গ্রামে এ ধরনের আরও অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে। শবেকদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত। মহিষাশুড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ জাকির হোসেন মেম্বার বলেন, এলাকায় গরু সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হয়। নরসিংদী জজ কোর্টের আইনজীবী এডঃ কামাল হোসেন বলেন, সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় ঈদের দিনে তাদের বেশ বাড়তি আনন্দ দেয়। গোশত ভাগবাটোয়ারা করা, গোশত রান্না করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ ধরনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সমিতিকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে। মাধবদীর সালমা টেক্সটাইলের মালিক বাবুল মিয়া বলেন, সকল শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহণে এ ধরনের গোশত সমিতি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com