দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক লাইভ ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, এবারের নাকি ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবারের ঈদ স্বস্তিদায়ক সেটা ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে, তার যে ক্ষমতাসীন দল তাদের কাছে স্বস্তিদায়ক, তাদের অর্থ-বিত্ত-টাকা কোনো কিছুর অভাব নাই। দেশে-বিদেশে অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের কাছে ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়েছে, আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে ঈদ স্বস্তিদায়ক হয়নি। আমাদের পোশাক শ্রমিক, আমাদের শিক্ষার্থীরা, আমাদের শ্রমজীবী মানুষ, যারা রিকশা চালক, ভ্যান চালক তাদের যে সঞ্চয়, সেই সঞ্চয় এখন নিঃশেষের পথে। গণমাধ্যমে আপনারা দেখেছেন, ঈদে সাধারণ মানুষরা যে একটু কেনা কাটা করবে তাদের সেই সঞ্চয় নেই।
তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে চলেছে সরকারের অপব্যবস্থাপনা। সরকারের নানা ধরণে নীতির কারণে যে হয়রানি এবং দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা ওবায়দুল কাদের সাহেবরা হয়ত লক্ষ্য করছেন না। তিনি তো মন্ত্রীর যে গরম সেই গরমে মধ্যে উঞ্চ হয়ে আছেন। তিনি তো জনগণের দিকে তাকিয়ে দেখছেন না যে, ঈদের দিন কি হয়েছে? ওবায়দুল কাদের সাহেব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্বে। বৃহস্পতিবার ঈদের দিনেই ১০ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এমন কি লঞ্চে করে ঈদের দিন বাড়িতে যেতে গিয়ে লাশ হয়ে গেছেন।
রিজভী বলেন, ঈদের দিন ভিড় কম হবে ভেবে বিল্লাহ তার পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। বেপোরোয়া গতিতে লঞ্চের ধাক্কায় এক পরিবারের তিনজনসহ ৫ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। তারা ঈদের দিন বাড়ি যাচ্ছিল তারা লাশ হয়ে ফিরে আসলো। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার স্বস্তি থাকতে পারে, আপনার নেতাদের স্বস্তি থাকতে পারে, আপনাদের মন্ত্রীদের স্বস্তি থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বস্তি নেই। এটাই বাস্তবতা।
‘রমজান মাসে বিএনপি এক হাজার ইফতার পার্টি করেছে এবং খাবার খেয়েছে আর আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপি তো ককটেল পার্টি করেনি, বিএনপি ইফতার পার্টি করেছে। ইফতার মাহফিল বা ইফতার পার্টি, এটা হচ্ছে ধনী-গরীব নির্বিশেষে আশে-পাশের যারা মানুষ তাদেরকে নিয়ে এটা করে। যুগ যুগ ধরে এই ইফতার পার্টি করা হয়েছে। এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রীতিতে পরিণত হয়েছে।এখানে অনেক গরীব মানুষ, ভিক্ষুক-নিঃস্ব যারা এই ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে, তাদের যে সিয়াম সাধনা, তারা যে রোজা রাখে, সারা দিন রোজার পর, না খেয়ে থাকার পর খাবার সংস্থান থাকে না, এই ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে তাদের খাবারের সংস্থান হয়। সেটিকে প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্গ করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি ইফতার মাহফিলের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে অনেক মানুষকে ধনী-গরীব-অসহায় মানুষকে নিয়ে ইফতার মাহফিলে বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ যে ককটেল পার্টিতে বিশ্বাস করে সেটিতে আমরা বিশ্বাস করি না।
রিজভী বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন, সম্প্রতি কারাগারে ছিলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন, যাদের অনেকের ব্যবসা-বানিজ্য কেড়ে নেয়া হয়েছে, যারা পথের ফকিরে পরিণ হয়েছে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে দলের বিভিন্ন ইউনিট ইফতার পার্টি করার চেষ্টা করেছে। এজন্য আমরা গর্বিত। এতো দু:খ-দুর্দশার মধ্যে, এই বেদনার মধ্যে আমরা সারা দিন রোজা রেখে আমাদের ঘনিষ্ঠ লোকজনদেরকে নিয়ে ইফতার মাহফিল করেছি, আমরা আনন্দিত।
তিনি বলেন, রাজধানী শহর যেন আগুনের নরককুন্ড। কিছুদিন আগে বেইলি রোডে, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঈদের দিনে এবং আজকেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৬/৭ জন মানুষ এখন কাঁতরাচ্ছে। তাদের জীবন এখন আশঙ্কাজনক। এই তো ঈদের উপহার সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে, তারা চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখার কারণে জনগণের যে দুরাবস্থা সেদিকে নজর দেননি। কারণ কি? তারা দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ নন, তারা প্রকৃত ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত নয়, শেখ হাসিনার সিলেকশনে এই সরকার, শেখ হাসিনার সিলেকশনে এই সংসদের এমপিরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের দায়বদ্ধ বা জবাবদিহিতা থাকবে কেনো? তাদের জবাবদিহিতা শুধু শেখ হাসিনার কাছে। ব্রিফিংয়ের বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।