সরকারের নৌকা নিয়ে এখন মানুষের কাছে যাবার সাহস নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সরকারই কিন্তু আইন করেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মার্কা দিয়ে ভোট করার জন্য। তারা আইন কিন্তু বাতিল করে নাই, আইন রেখেছে। এই আইন রেখেই কিন্তু তারা নৌকা নিয়ে জনগণের কাছে যাবার সাহস পাচ্ছে না।
গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) চিন্তা করছে বাংলাদেশের মানুষ তো নৌকাকে ভয় পায়, তাই নৌকার কথা শুনলে ভোটকেন্দ্রে যাবে না।
তাই এবার নৌকাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। মানে তাদের নৌকা নিয়ে এখন মানুষের কাছে যাবারও সাহস নাই। নৌকাকে কিন্তু এখন তারা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই কিন্তু আইন করেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মার্কা দিয়ে ভোট করার জন্য। তারা আইন কিন্তু বাতিল করে নাই, আইন রেখেছে। এই আইন রেখেই কিন্তু তারা নৌকা নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ তারা (আওয়ামী লীগ) দেখছে- বাংলাদেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে সেখানে তারা (জনগণ) নাই। জনগণ নৌকাকে বয়কট করেছে।
তারা এখন নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে যে, এখন তো নৌকা নাই আপনারা আসতে পারেন। তারা আরেকটি ভাওতাবাজির নির্বাচন করতে যাচ্ছে।
আজকে যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তারা আজকে ইতিহাস দখল করার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা আজকে ইতিহাসবিদ হয়ে গিয়েছেন। ইতিহাসবিদ হওয়ার মধ্যে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা সবচেয়ে বড় ইতিহাসবিদ। তাদের ইতিহাসকে প্রমাণ করার জন্য আবার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা আছে। এমনকি বিচার বিভাগকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘রাজনীতিবিদ যখন ইতিহাসবিদ হয়ে যায় তখন সেটা আর ইতিহাস থাকে না, সেটা হয়ে যায় প্রোপাগা-া। সেই প্রোপাগা-াকে ইতিহাসে পরিণত করার জন্য আমাদেরকে ইতিহাসে রিভিজিট করতে হবে। সেটা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এবং ইতিহাস কিন্তু রিভিজিট হবে। রাজনীতিবিদরা চান বা না চান, প্রত্যেকটা দেশের ইতিহাস রিভিজিট করতে বাধ্য’- বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এখন বাংলাদেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বলতে আর কিছু নাই। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে মানুষের ভয়ের কিন্তু কিছু নাই। তারা তো দেশের মালিক, মালিক কী ভয় পেতে পারে? কিন্তু আজকে তো বাংলাদেশ সেই অবস্থায় নাই। যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, যেই দেশে অন্যায়-জুলুমের প্রতিবাদ করতে পারব না, সেই দেশে থাকবও না। জন্মগ্রহণ করেছি মানুষের জন্য কথা বলার জন্য। এখন মানুষের জন্য যদি কথা বলতে না পারি তাহলে আমার জন্মগ্রহণ বৃথা। ২০৪১ সাল পর্যন্ত নাকি এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে। এদের নাকি মৃত্যু নাই। এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্ববান জানান তিনি। জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।