মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলেও উচ্চ আকাঙ্খা, বিলাসিতা ও বেপরোয়া জীবন যাপনের মাধ্যমে কোটিপতি পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেকে জাহির করতেন। আয়ের উৎস্য না থাকলেও দামি দামি পোশাক আর সাজ গোজে তার চলাফেরায় ছিলো আভিযাত্যের ছাপ। তাই তো খরচের এ টাকার যোগান দিতে কাজে লাগান সৌন্দর্য্যকে। তার লক্ষ ঝিলো সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক নেতা, ক্ষমতাশীল ব্যক্তি। বলছি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার সমালোচিত ২ সন্তানের জননী মানতাসা আফরিন মেঘলা(৩৬) এর কথা। তার অত্যারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। তবে, তার মামলা হামলায় মুখ খুলতে চান না কেউ। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা, এরপর কখনো নিজের বাড়ি কখনো বা পাতানো ফাঁদ মতো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মোবাইলে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণই তার লক্ষ। শেষ মেশ ধারনকৃত ভিডিও ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া তার আয়ের মূল উৎস্য। সমাজের সহজ সরল মানুষেরা এসব ফাঁদে পা দিয়ে একদিকে যেমন হচ্ছেন নিঃস্ব, অন্যদিকে এ কাজের মাধ্যমেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন মেঘলার মতো নারীরা। জানা গেছে, পার্বতীপুর পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইন্সটিটিউট মাঠ সংলগ্ন বাবু পাড়া কলোনীতে অবৈধভাবে দখল করা একটি বাসায় তার বসবাস। পারিবারিকভাবে তার মা শাহনাজ পারভীন ও ভাই আকাশ বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি নানা কৌশলে বাগিয়ে নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার পদ। পরে গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ পৌর মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে আরো উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠেন ওই নারী। পদ পাওয়ায় রাতারাতি শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থান, সড়ক, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ছবি সম্বলিত তার পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। আর এ পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন নেত্রী। এর পর থেকে তার অপরাধের ফিরিস্ত দীর্ঘ থেকে হতে থাকে আরো দীর্ঘ। রেলের বাসা বিক্রিতে ভাগ বসানো, নেশার সাথে জড়িতদের নিয়ে গড়ে তোলা কিশোর গ্যাং, নারী দিয়ে বহিরাগত ছেলেদের ফাঁসানো কি করে নি? কথিত এই নেত্রী। তার এমন কান্ডে সুশীল সমাজে আলোচনার ঝড় বইছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, চাকুরী শেষে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় বরাদ্দকৃত রেলের বাসাটি অফিসে বুঝিয়ে দেয়ার আগ মুহুর্তে এসে হাজির তার গ্যাং এর সদস্যরা। পরে তাদের মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। অন্যথায়, ওই বাসায় তারা লোক ঢুকাবেন। ফলে অফিস বাসা বুঝিয়ে না পেলে আমার পেনশন আটকে যাবে। তাই টাকা দিছি। নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলে ১৩ এপ্রিল সকাল ১১ টায় পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ প্রশ্নবিদ্ধ এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক। সভাটি পরিচালনা করেন দলের সাধারন সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমিরুল মোমেনিন, তথ্য সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন ছোট, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন সমাজ। উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুলতানা নাসরিনসহ অনেকেই। উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুলতানা নাসরিন জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৌর মহিলা আওয়ামীলীগের ৫১ সদস্যের কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ পৌর মহিলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটি গঠন হয়েছিল। উক্ত কমিটির বয়স হয়েছিল ৪ মাস ১১ দিন। সভাপতি পদে আরিফা আক্তার রুনা ও সাধারন সম্পাদক পদে মানতাশা আফরিন মেঘলা দায়িত্বে ছিলেন। উক্ত সভায় তামান্না ইয়াছমিনকে আহবায়ক ও মনিরা বেগমকে সদস্য সচিব করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। অভিযুক্ত মানতাসা আফরিন মেঘলার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এলাকাবাসীর স্বার্থে দ্রুত এ নারীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দের। এ বিষয় পার্বতীপুর জি আর পি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিউল আযম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।