ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অজুহাতে দাম বেড়েছে সবরকমের জিনিসপত্রের। এ তালিকায় বাদ নেই গোখাদ্যও। এতে দিশেহারা রাজশাহীর খামারিরা। নিরুপায় হয়ে খামারের পরিসর কমিয়েছেন অনেকেই। খামারিদের দাবি, গত কয়েক বছরে শুধু গোখাদ্যের দামই বেড়েছে ৩-৪ গুণ পর্যন্ত। চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যয়ও বেড়েছে। তাই খামারে গরুর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন বেশিরভাগ খামারি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোরবানি ঘিরে রাজশাহীতে এবছর চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি গরু, তিন হাজার ৭৬৯টি মহিষ ও তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি ছাগল। জেলায় খামার বা চাষি আছে সাড়ে ১৭ হাজার। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা তিন লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এক লাখ ৪১ হাজার ২১৯টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এগুলো অন্য জেলার চাহিদা মেটাবে। নগরীর অদূরে পবা উপজেলার হরিয়ানের রনহাটে ২০১৫ সালে ১০-১৫টি গরু নিয়ে শাহী অর্গানিক ফার্মের যাত্রা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। সেই গরু বিক্রির লাভের টাকায় বাড়াতে থাকেন খামারের পরিসর। গরুর সংখ্যাও গিয়ে ঠেকে একশর কাছাকাছি। তবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে তার খামারে। গরুর সংখ্যা কমে নেমেছে অর্ধশতে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে ৪-৫ বছর আগে গরুর যে দাম ছিল, সেই তুলনায় এখন গরুর দামও অনেক কম। কিন্তু ৪-৫ বছর আগে গোখাদ্যের যে দাম ছিল তার তুলনায় এখন দু-তিনগুণ বাড়তি। সে কারণে প্রত্যেক খামারির এখন ঠিকমতো গরু লালন-পালন করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশানুরূপ দামে গরু বেচতে পারছেন না।’
পবা উপজেলার খামারি মাসুদ রানা বলেন, ‘প্রতিবছরই আমরা অন্তত ২০-২৫টি গরু পালি। তবে খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার আগের মতো গরু পালতে পারিনি। এবার ১০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি।’ গোদাগাড়ী উপজেলার চার আষাড়িদহ এলাকার গরুর খামারি মাসুদ রানা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতবার ২০টি গরু পালন করেছি। তবে এবার সেটি পারিনি। গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি। গতবারের ২০টি গরু পালন করতে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ১০টি গরু পালন করতে সেই একই খরচ পড়েছে। এভাবে খরচ বাড়তে থাকলে গরু পালন করা কষ্ট হয়ে যাবে।’ তবে সব রকমের খরচ বাড়লেও আসন্ন কোরবানির ঈদে ভালো দামের আশায় খামারিরা। তারা বলছেন, ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ করা গেলে দেশি গরুর চাহিদা থাকবে। এতে তারা লাভবান হবেন।
পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের জাগিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মতলেব ম-ল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার মাসে দুইটা মহিষের পেছনে আমার এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভুসি, খেসারি, বুট, গমসহ সব রকমের জিনিসের দাম বাড়তি। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা তো দাম পাচ্ছি না। অথচ ঠিকই ৮০০-৮৫০ টাকা কেজি দরে মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে। লাভ যা করার কসাই আর দালালরা করছে।’
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য যখন বাড়বে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। তবে রাজশাহী জেলার যে তথ্য, গত বছরের যে কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল তার তুলনায় উদ্বৃত্ত আছে, কোনো সমস্যা হবে না। উৎপাদন বা গোখাদ্যের দাম যদি বাড়ে তাহলে মাংসের দামও বাড়বে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, একসময় পতিত জমি বা চরা লের পরিত্যক্ত জমিতে ব্যাপক গোখাদ্য উৎপাদন হতো। কিন্তু দিন দিন এসবের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। এখন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মানুষকে অধিক মূল্য দিয়ে পশু কিনতে হবে। এতে অনেক শিক্ষিত যুবসমাজ যারা গোখামারে এগিয়ে আসছিলেন, তারা এখন পিছিয়ে যাবেন। সংশ্লিষ্টদের উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।-জাগোনিউজ২৪.কম