এবার কোরবানি উপলক্ষে রাজবাড়ীতে পরম যতেœ প্রায় ৪০ হাজার পশু লালন-পালন করেছেন খামারি ও গৃহস্তরা। এরমধ্যে ষাড় গরু ও ছাগলের সংখ্যা বেশি। তবে এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর সংখ্যা বেশি। এদিকে গো-খাদ্যসহ সকল দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় প্রায় ১৫ হাজার কম কোরবানির পশু প্রস্তুত হয়েছে। তারপরও চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে এবারও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাটে যাবে রাজবাড়ীতে প্রস্তুতকৃত কোরবানির পশু। এছাড়া খামারিদের পশু লাইভ ওয়েট এবং অনলাইন প্লাটফর্মসহ বিভিন্নভাবে বিক্রির সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার খামারি ৩৯ হাজার ৪২৫টি গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন জাতের পশু প্রস্তুত করেছেন। এরমধ্যে গরু ২০ হাজার ৯৭৬টি, ছাগল ১৮ হাজার ১৩০টি, মহিষ ১৩৮টি এবং ভেড়া ও গাড়ল ২৭৫টি।
গৃহস্থ মো. মোকছেদ মোল্লা বলেন, তিনি কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ৩টি ষাড় গরু লালন-পালন করছেন। কিন্তু খাবারের অত্যধিক দাম হওয়ায় পালতে কষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন একেকটি গরুর পেছনে ১ থেকে ২শ টাকা খরচ। সে হিসাবে বিক্রির সময় দাম পান না। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে গরু কম পালছেন।
রাজবাড়ী সদরের এবিসি এগ্রো ফার্মের মো. আমান হোসেন বলেন, অন্য গরুর চেয়ে কোরকানির গরুর খাবার বেশি লাগে। বর্তমানে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় এবার খামারে কোরবানির ষাড় গরু কম পালছেন। গরুর খাবারের দাম কম হলে তাদের জন্য ভালো হতো। এছাড়া গরু বিক্রির সময় তারা দামও পান না। মাঝখান থেকে লাভবান হয় কসাই। ৬শ টাকা কেজি দরে নিয়ে ৭ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি করে। যার কারণে এবার তাদের খামারে কোরবানির গরু কম। বালিয়াকান্দির জান এগ্রো লিমিটেডের ম্যানেজার আল ইমরান বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে তাদের খামারে ৬টি গরু ও ১টি মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয় না। নিজেদের গম, ভুট্টা, ভূষি, ছাল ও ঘাস খাওয়ানো হয়। এই গরুগুলো পরিচর্যার জন্য বেশ কয়েকজন লোক আছে। যারা খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, গরুর খাবার দেওয়া ও গোসল করায়। রাজবাড়ী সদরের পদ্মা এগ্রো ফার্মের আমজাদ হোসেন তালুকদার বলেন, তাদের খামারে কোরবানির জন্য ২০টি গরু প্রস্তুত করছেন। খামারে সর্বচ্চো ২৫ মণ ওজনের গরুর পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু আছে। গরুর খাবারে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র ঘাস, খড়, ভুট্টার গুঁড়া খাওয়ান।
রাজবাড়ী জেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এপিসোড এগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ কহিনুর বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। লোকসান দিতে দিতে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারিভাবে গো-খাদ্যের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিলে তারা উৎসাহিত হতেন এবং খামারও বাড়তো। সরকারিভাবে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন খামারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এবার জেলায় কোরবানির পশু চাহিদার চেয়ে বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে গরু লালন-পালন করেছেন খামারিরা। জেলায় ৩২ হাজার পশু চাহিদার থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে ৪০ হাজার। এরমধ্যে পারিবারিকভাবে লালন-পালনের তথ্য তাদের কাছে নেই। যে কারণে মনে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে কম, কিন্তু আসলে সেটা না। পারিবারিকভাবে লালন-পালনের তথ্য পেলে গত বছরের মতোই হবে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক কারণে গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও গ্রাম ও খামারি পর্যায়ে কাঁচা ঘাসের চাষ বেড়েছে। যার কারণে খাদ্যের খরচ কিছুটা হলেও কম হচ্ছে। এবার চাহিদা বিবেচনায় খামারিদের বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু প্রস্তুতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কোরবানির পশু বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্মসহ সার্বিক বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগ কাজ করছে এবং চাহিদার বেশি পশু প্রস্তুত হওয়ায় এবছরও রাজবাড়ীর পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানের হাটে বিক্রির জন্য যাবে।