মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

সূরা হাশরের ফজিলত

শরিফ আহমাদ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪

আল-হাশর কুরআনের ৫৯ নম্বর সূরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ। মোট আয়াত ২৪টি। দ্বিতীয় আয়াতের হাশর শব্দ থেকে সূরাটির নামকরণ। এর অপর নাম হলো সূরা বনু নাজির। হজরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রা: বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা:-কে বললাম, এটি হাশর। তিনি বললেন, একে বনু নাজির বলো, কেননা এ সূরায় মদিনা থেকে বনু নাজির গোত্র বহিষ্কারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি-৪৫২১) বর্ণিত সূরায় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি, মুসলমান কর্তৃক বিজিত অঞ্চলে সম্পদ বণ্টন, মুনাফেকদের আচার-আচরণ ও তাওহিদের আলোচনা স্থান পেয়েছে।
সূরা হাশরের শানে নুজুল
এই সূরা নাজিল হয় চতুর্থ হিজরিতে বনু নাজিরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বনু নাজির ছিল একটি ইহুদি গোত্র। রাসূল সা: রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে ওদের সাথে শান্তিচুক্তি করেন। কিন্তু ওরাই প্রথম চুক্তি ভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতা করে। রাসূল সা:-কে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
ভুলবশত এক ব্যক্তিকে হত্যার মুক্তিপণ আদায়ের জন্য রাসূল সা: ও বিখ্যাত সাহাবায়ে কেরামের একটি দল বনু নাজিরের কাছে যান। তারা মুক্তিপণ আদায়ে সম্মতি জানিয়ে গোপনে রাসূল সা:-কে ছাদের উপর থেকে পাথর ফেলে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের কুকীর্তির কথা রাসূলে কারিম সা:-কে জানিয়ে দেন। মদিনায় ফিরে এসে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এ সময় তাদের মদিনা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। কিন্তু মুনাফিকদের আস্ফালন ও সাহায্য পাওয়ার আশায় কেউ বের হলো না। উল্টো তারা রাসূল সা:-কে চ্যালেঞ্জ করে বসে। শেষমেশ তিনি ১৫ দিন অবরোধ শেষে তাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। বনু নাজিরের ঘটনা চতুর্থ হিজরি সনে ওহুদ যুদ্ধের পরে ও খন্দক যুদ্ধের আগে সংঘটিত হয়। (তাফসিরে জালালাইন : ৬/৪৩৭, সিরাতুল মুস্তফা : ২/২৩১)
বনু নাজিরের শেষ পরিণতি : ইতিহাস সাক্ষ্য যুগে যুগে বিশ্বাসঘাতকদের শেষ পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। বনু নাজিরকে ওয়াদা ভঙ্গ, নবী হত্যার ষড়যন্ত্র ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল। ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- বনু নাজির এবং বনু কুরায়জা গোত্রদ্বয়ের ইহুদিরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে যুদ্ধ করেছিল। রাসূল সা: বনু নাজিরকে দেশান্তর করেন এবং বনু কুরায়জাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিয়ে তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন কিন্তু বনু কুরায়জাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদের হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছুসংখ্যক লোক যারা রাসূল সা:-এর সাথে মিলিত হয়েছিল তাদের তিনি নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলমান হয়ে যায়। রাসূল সা: মদিনার সব ইহুদিকে দেশান্তর করেন। বনু কায়নুকা গোত্রের ইহুদি (আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের গোত্র), বনু হারিছার ইহুদি এবং মদিনায় বসবাসরত সব ইহুদিকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। (মুসলিম-৪৪৪০)
ফজিলত ও আমল
হাদিস ও তাফসির গ্রন্থে সূরা হাশরের বেশ কিছু ফজিলত ও আমল উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি রাতে সূরা হাশর পাঠ করতেন। ইরবাজ ইবনে সারিয়া রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ঘুমানোর আগে মুসাব্বিহাত সূরাগুলো পাঠ করতেন। এগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে যে আয়াতটি এক হাজার আয়াত অপেক্ষা উত্তম। মুসাব্বিহাতের মধ্যে সূরা হাশর অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি-২৯২১)
দৈনিক ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে গুরুত্বের সাথে সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পাঠ করার অনেক ফজিলত রয়েছে। ইবনে ইয়াসার রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে আউজুবিল্লাহিস সামিউল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম তিনবার পাঠের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য ৭০ হাজার ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন। যারা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। এই দিন যদি সে মারা যায় তবে তার শহীদী মৃত্যু হয়। আর যদি বিকালে পাঠ করে এখনো একই ফজিলতই হবে। (তিরমিজি-২৯২২)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com