লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ৮৭৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার মাঝে গৃহ ও জমি হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে আবেগে আপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত এসব পরিবারের মানুষেরা। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল ১১ টায় গনভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালী যুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি। কালীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের মুখে মুখে দিন বদলের গল্প, স্বপ্নেও তাদের ভাবনা ছিল না দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর পাবেন। কমলা বানু (৬৮) বলেন, “আগে মানুষের জমিতে অস্থায়ী ঘরে থাকতাম, এখন স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। নিজেদের বাড়িতে বসবাস করছি। মেয়েরা পড়াশোনা করছে, এখন বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারি। নিজের একটু জায়গা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। অন্যের জমিতে থাকতে হতো ছনের ঘরে দুর্বিষহ কেটেছে ৪০ বছর। জীবনের ক্লান্তি লগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে আবেগে আপ্লুত বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগতেছে। আনোয়ারা বেগম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি বাজার এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণের দুই রুম রান্না ঘর, টয়লেট পেয়েছেন। আগামি দিন গুলো ভালোই কাটবে বলে প্রত্যাশা তার। দিনমজুর বাবার সংসারে অভাবের মাঝে বড় হয়েছেন। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুর দিয়ে সচল রেখেছেন চার সদস্যের পরিবারের চাকা। জীবনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পেটের ভাত ছাড়া জোগাড় করা ছাড়া কোনো সম্পদ বা বাড়ি করতে পারেননি মেহের আলী দম্পতি। অবশেষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি তারা। জমি আর পাকা বাড়ি পেয়ে সবুজ মিয়া বলেন, পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করেও একখ- জমি কিনতে পারি নাই। এখন শেখের বেটি হাসিনা হামাক জমিসহ পাকা বাড়ির মালিক করে দেছে বাহে। আল্লায় শেখের বেটিকে ম্যালা (অনেক) দিন বাঁচি রাখুক। হামরা নামাজে বসে প্রতিদিন দোয়া করি তার জন্য।একই আশ্রয়ণে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছেন ষাটোর্ধ্ব ফজলে করিম দম্পতি । এক সময় তাদের নিজের জমিসহ পাকা বাড়ি ছিল। কিন্তু তিস্তা নদী সব ভেঙ্গে চুড়মার করে দিয়েছে এরপর তাদের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ কয়েক বছর অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে তারাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমিসহ পাকা বাড়ি। একই আশ্রয়ণের তাহারুন নেছা বলেন, সারা জীবন কষ্ট করে কামাই (আয়) করেও টিনের ঘর করবার পারি নাই। এখন নিজের নামে দুই শতক জমিসহ পাকা বাড়িতে থাকছি বাহে। সবায় (সবাই) কয় বাড়িও খুব মজবুত কইরে বানাইছে। শুধু আনোয়ার বা বেলি বেগম নয় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের অনেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করছেন। যাদের এক খ- জমি ছিল না, একটা বাড়ির জন্য রোদ বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ঘরের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছিল। এমন ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলোকে খুঁজে আশ্রয়ণের জমিসহ বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতাংশ জমির দলিল ও দুই কক্ষের একটি পাকা বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি এসব ছিন্নমূল পরিবার। উল্লেখ এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে খাস জমি উদ্ধার করে ১৯১৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষা মুড়ি বাজার এলাকার আশ্রয়ণটিকে মডেল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির রঙে ভিন্নতা নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের মানুষদের যাতায়াতের জন্য আশ্রয়ণ থেকে মূল সড়কে ওঠার রাস্তাও পাকা করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলে এটিকে দেখতে অনেকটাই শহরের আবাসিক কোনো এলাকার মতোই লাগছে। গৃহ ও জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহর সভাপতিত্বে- লালমনিরহাট ৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড মতিয়ার রহমান,লালমনিরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহম্মেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শেমল, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন,রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল বাতেনসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।