রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

বড় প্রকল্প নিয়েও কমলনগরের মেঘনার ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না!

আবছার উদ্দিন রাসেল (কমলনগর) লক্ষ্মীপুর
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনার ভাঙন রোধে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না নদীভাঙন। চলতি বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে অনেক বেশি।পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেঘনাতীরের বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকেই নাটকীয় অবস্থা চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে রামগতি-কমলনগর উপজেলা দুটি। লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে দীর্ঘ তিন যুগে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। শুকনো মৌসুমেও ভাঙছে নদী। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে একাধিকবার নদীর তীররক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, বরাদ্দ থাকলেও টাকা ছাড় না পাওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন থেকে কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে রক্ষায় ২০২১ সালের ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৯ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে কয়েকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে ৯৯টি লটে কাজ পায় ঠিকাদাররা; যার মধ্যে ৪৩ লটে প্রায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হলে ২০২২ সালে ৪১টি লটের কাজ শুরু হয়। প্রতি লটে ৩০০ থেকে ৩৩০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করার কথা। পর্যায়ক্রমে বাকি লটেরও কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শ্রমিক সংকটের কারণে কিছু ঠিকাদার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখেন। পরে আবার কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে কাজের গতি এতই ধীর ছিল যে, দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়েনি। ভাঙনকবলিত নদীপারের বাসিন্দারা জানান, ইতোমধ্যে মেঘনা গিলে খেয়েছে দুই উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর ফসলি জমি। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ এবং কাঁচা-পাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে ৩৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেগুলো অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে এখন চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় নতুন করে আরও ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের কাছাকাছি চলে আসায় জোয়ারের সময় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকার বাসিন্দা দিদার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কাজ শুরুর দুই বছর পার হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। বর্ষার মৌসুমে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সব সময় আতঙ্কে থাকি। এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। প্রতিদিন নতুন করে একের পর এক ভাঙছে বসতভিটা। অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও যাচ্ছে মেঘনার গর্ভে। রামগতি উপজেলার বিবিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানচিত্র থেকে রামগতি-কমলনগর হারিয়ে যাবে। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল বলেন, এর জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের তদারকির অভাবে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে বারবার প্রতারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের ভাবা উচিত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল টেকের’ কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বালু সংকট কাটিয়ে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করলেও মাঝে মাঝে একই সংকট দেখা দেয়। তখন বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরাও টেনশনে রয়েছি। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান বলেন, মাঝে মাঝে বালু সংকট দেখা যায়। এ সংকট এখন আর নেই। মোটামুটি কাজ চলমান রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মেঘনার তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি আমার নির্বাচনের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল। এ প্রকল্প নিয়ে কোনো ধরনের নয়ছয় বরদাশত করা হবে না। কাজের ধীরগতি কেন হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা বলবেন জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com