কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ আজ সড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকবে, সাংবাদিক ও জরুরি সেবার পরিবহনগুলো থাকবে ব্লকেড কর্মসূচির আওতামুক্ত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এবার সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষণা করেছেন। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করবে। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই ঘোষণা দেন। কর্মসূচি ঘোষণায় বলা হয়, সাংবাদিক ও জরুরি সেবার পরিবহনগুলো এই ব্লকেড কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। তবে সড়ক ও রেলপথ সবকিছু বন্ধ থাকবে। গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণসংযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশের বাইরেও তারা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস চান কোটা সংস্কারের বিষয়ে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানি হবে। গতকালও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোটা পদ্ধতি ইস্যু সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার নেই, ইস্যু এখন সর্বোচ্চ আদালতের কাছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সারাদেশের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
কোটা সংস্থার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবি, এক. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; দুই. ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে; তিন. সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং চার. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দিনভর বাংলা ব্লকেড : সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই ঘোষণা দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন জায়গার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণসংযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশের বাইরেও তারা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে লিখিত আশ্বাস চান কোটা সংস্কারের বিষয়ে। এ কারণে তারা বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি, সেজন্য সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরাও এই ভোগান্তি চাই না। আর এই ভোগান্তির জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে। কোটার এই ইস্যুতে আমরা মনে করি সরকার ও নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার আছে। বুধবার থেকে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি থাকবে। সকাল ১০টা থেকে ব্লকেড কর্মসূচি সারাদিন চলবে। সড়ক ও রেলপথ ব্লকেডের আওতাভুক্ত থাকবো।
সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলনটি চালিয়ে যাচ্ছি এটি কোটা বাতিলের আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন হচ্ছে বাস্তবতার আলোকে ন্যায্যতার পর্যায়ে কোটা সংস্কার করা। আমরা বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধী কিনা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার বিরোধিতা করছি না, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের কোটার বিরোধিতা করছি।
ন্যূনতম কোটা রাখা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি কোটা শুধু প্রতিবন্ধী,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আমরা ৫ পার্সেন্ট কোটা যৌক্তিক বলে বিবেচনা করছি। আমাদের মূল দাবি হলো নির্বাহী বিভাগের কাছে।
দুই শিক্ষার্থীর দায়ের করা রিটের বিষয়ে সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, এটি আমাদের আন্দোলনের কোনও অংশ নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজেদের ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গা থেকে এই রিট করেছেন। রিটের রায় যাই হোক না কেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে তো কোনও কথাই নেই, আন্দোলন চলমান থাকবে। আর যদি ইতিবাচক আসে, যদি আমাদের পরিপত্র বা লিখিত কোনও ডকুমেন্টের মাধ্যমে আশ্বস্ত করা হয় যে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে, তবে আমরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাবো আনন্দ মিছিল করতে করতে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : জাবি সংবাদদাতা জানান, ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি আজ বুধবার। এতে রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের উভয় লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে আধাঘণ্টা পর সোয়া চারটায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এরপর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেøাগান দেন।
অবরোধকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু হয়, তখন বলা হয়েছিল- এটি অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্ত। এত বছর পরেও সেই অন্তর্বর্তীকালীন সময় পার হয়নি? এখন মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা প্রথা বহাল রাখার যৌক্তিকতা নেই। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আমরা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আজ বুধবার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের শুনানি আছে। সেখানে যদি ছাত্রসমাজের যোক্তিক দাবি উপেক্ষা করে আমাদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়, তাহলে পুরো দেশ অচল করে দেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তবে যেহেতু দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে। সেহেতু আমি নৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে পারি না। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য বলেছি।’
নোয়াখালীতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন : নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নোবিপ্রবিসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত সোমবার নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রথমে মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারী। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিবাদ সম্বলিত ফেস্টুন ও কোটাবিরোধী সেøাগান দিতে থাকে।
মানববন্ধন শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, চৌমুহনী এসএ কলেজ, জালাল উদ্দিন কলেজ ও সরকারি কবিরহাট কলেজ, সরকারি মুজিব কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আদালতে শুনানি আজ : সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানি হবে আজ। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যে আবেদন করেছে, তা বিচারাধীন। এটি থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান দু’জন মিলে চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিএমপি (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) ফাইল করছেন। তারা বলেছেন, ‘আমরা (আবেদনকারী) সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে। যারা আন্দোলন করছে তাদের পক্ষে নয়। আমরা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছি। গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। এর ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়।
২০১৮ সালে কোটা বাতিল : সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি থাকায় প্রশাসন যন্ত্রকে কার্যত মেধাশূন্য করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশ ছিল। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশে মোধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনিদের দেয়ার প্রচলন শুরু হয়। এতে করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং মেধাবীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্ছিত হন। আর দেশের মেধাবীরা দেশে চাকরি না পেয়ে বিদেশে চলে যান। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে ২০১৮ সালে আন্দোলন হয়। যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলোর অন্যতম ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার। আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন, সেই সময়ের ৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ, সেটি সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। কিন্তু আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন ‘কোনো কোটাই রাখবো না’। অতঃপর মন্ত্রিসভা ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সরকার জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে (৯ম থেকে ১৩তম) নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো কোটা বহাল নেই, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে (১৪তম থেকে ২০তম পর্যন্ত) কোটা বহাল রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ প্রার্থীর মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোটার বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র স্পষ্ট করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সরকারি চাকরিতে অষ্টম বা তার ওপরের পদেও সরাসরি নিয়োগে কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে টানা পাঁচ বছর সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোনো কোটা ছিল না। তবে ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ৭ সদস্য ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই থেকে আন্দোলনে নামের শিক্ষার্থীরা। ৭ ও ৮ জুলাই তারা দুপুরের পর থেকে রাত ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।