ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এবার ভারতীয় বর্বরতার শিকার হলেন আরেক কিশোর শ্রী জয়ন্ত। পরপর এই দুই ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছে নেটাগরকিরা। বিএসএফের একের পর এক বর্বরতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালানো স্বৈরাচারিণী শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে এবার সীমান্ত হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে ভারত। সর্বশেষ নারকীয় এই দুই হত্যাকা- যেন বাংলাদেশিদের ক্ষোভ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন নেটিজেনরা।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যারা এতদিন ভুয়া ঘটনায় আন্দোলনে নেমে পড়তেন তারা এখন প্রতিবাদ না জানানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। পরপর দুই সংখ্যালঘু কিশোর- কিশোরী বিএসএফের নারকীয় হত্যাকা-ের শিকার হল। ভারতীয় এই বর্বরতার বিরুদ্ধে শাহবাগে কেন এখন আন্দোলন করা হচ্ছে না?- সেই প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সর্বশেষ, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ধনতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি করে শ্রী জয়ন্ত নামে (১৫) এক বাংলাদেশি কিশোরকে হত্যা করে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ধনতলা সীমান্তের ৩৯৩ নং পিলার-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে নিহত কিশোরের মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানান স্বজনরা।নিহত জয়ন্ত লাহীড়ি ধানতলা ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মহাদেবের ছেলে। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তের পাশে জলাশয়ে পৌঁছামাত্র হঠাৎ বিএসএফকে দেখে স্বর্ণা। এসময় সে আতংকিত হয়ে অনুনয়-বিনয় করে বলে আমাদের মেরোনা আইনের আশ্রয়ে নিয়ে নাও। বাংলায় বলা কথাগুলোর প্রতি উত্তরের বদলে বিএসএফ এর বুলেটে বুক ঝাঁজরা হয়ে যায় স্কুল ছাত্রী স্বর্ণার।
স্বর্ণা দাস নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশনে পাঠানো প্রতিবাদ-লিপিতে বাংলাদেশ এ ধরনের নির্মম ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশী মানুষকে গুলি করে হত্যা করার এক মহোৎসব চালাচ্ছে ভারত। তারা ৫ই আগস্টের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতেছে। আমরা সবাই এই হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভারতকে এ হত্যাকা- অবশ্যই থামাতে হবে, যদি না থামায় এর প্রতিক্রিয়া ভারত কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাবে। ফেসবুকে আবু নাসের ইকবাল লিখেছেন, সুশীল সমাজ এখন কোথায়? ভারত প্রীতি করবেন না!? পারলে এখন মহাজোট হয়ে ফিরে আসুন। জাতির কাজে লাগবে।
জাহিদুল আলম চৌধুরী লিখেছেন, আমরা এ ধরনের জঘন্য হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাই । ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি ।
আমজাদ বিন সেলিম লিখেছেন, তারা ওপার থেকে এইদেশের বসবাসরত তাদের স্বজাতিদের নিয়ে চিন্তিত, এখন দেখি উল্টো তারাই গুলি করে মারে। তারপরও এইদেশের সুবিধাবাদী হিন্দুরা কোন আওয়াজ করবেনা এই হত্যাকান্ডের জন্য।
খোকন রাজ লিখেছেন, সীমান্ত হত্যা আর সহ্য করা হবেনা। কে হিন্দু, কে মুসলিম এসব দেখার সময় নাই। এখন আমরা সবাই বাংলাদেশী। সবাই এক হয়ে তীব্র প্রতিরোধ করতে হবে।
এইচএম লিখেছেন, ভারত প্রীতি লোকগুলো কোথায় এখন? সাহাবাগী সেই সম্প্রদায়ের লোকগুলো কোথায়? ভারতের বিরুদ্ধে এখন আন্দোলন করবেন না? নাকি স্বজনপ্রীতি কমে যাওয়ার ভয়ে আছেন। আমি আমার দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘৃণা করি না, আমি মনে করি আমার মতো তারাও বাংলাদেশী। তারাও আমার প্রতিবেশী।
সাদ্দাত মল্লিক শ্যামল লিখেছেন, এক ই.ঙ.চ থেকে অপর ইঙচ পর্যন্ত সীমান্ত খালি রাখা যাবেনা,খালি রাখার কারণেই ভারতীয়রা গুলি করে মারতে পারে,অবৈধভাবে লোকজন যাতায়াতের চেষ্টা করে,এই জন্য ৪০০/৫০০ গজ দূরে দূরে ৩ জন করে বিজিবির টহল থাকতে হবে ২৪ ঘণ্টা।ভারতীয়দের সাথে একটা ঘটনা ঘটলে বিজিবির সেই স্থানে পৌছাতে পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়,এইজন্যই সাথে সাথে প্রতিশোধ নেওয়া যায়না।সুতরাং বিজিবিকে বলতে চাই সিস্টেমটা তাড়াতাড়ি বদলান।
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে কিশোর শ্রী জয়ন্ত নিহত: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ধনতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি করে শ্রী জয়ন্ত নামে (১৫) এক বাংলাদেশি কিশোরকে হত্যা করেছে। গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ধনতলা সীমান্তের ৩৯৩ নং পিলার-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে নিহত কিশোরের মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানান স্বজনরা। নিহত জয়ন্ত লাহীড়ি ধানতলা ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মহাদেবের ছেলে।