শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

গম ও গমজাত পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪

গম ও গমজাত পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে বেশ কয়েক বছর গম আমদানি নেতিবাচক ছিল। সেসব পরিস্থিতি কাটিয়ে রেকর্ড পরিমাণ গম আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৭৭০ টন গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার টন। বাকি ৬০ লাখ ২৪ হাজার টন আমদানি করেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল। এরপর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গম আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি কমে ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টনে নেমে আসে। এর পরের বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি আরও কমে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৪০ লাখ ১২ হাজার টন গম। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয় কৃষ্ণসাগরে অস্থিরতা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি আরও কমে নেমে আসে ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টনে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমায় দেশে গম থেকে প্রস্তুত করা আটা-ময়দার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। সঙ্গে বেড়ে যায় আটা-ময়দা থেকে তৈরি বেকারিসহ অন্য পণ্যের দামও। এখন গমের আমদানি বাড়ায় আটা-ময়দার দাম কিছুটা নি¤œমুখী। তবে আমদানিকারকরা এও বলছেন, আগের তুলনায় দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব বেশি দাম সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
সব সংকট কাটিয়ে রেকর্ড গম আমদানি:এদিকে তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর বিশ্ববাজারে গমের দাম টানা কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে প্রতি টন গমের দাম ৪৫০ ডলারে ঠেঁকেছিল, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন ২০০ ডলারে নেমে আসে। পরে কয়েক মাস দাম বেড়ে গত সোমবার (৮ জুলাই) ২৩৯ ডলারে প্রতি টন গম বিক্রি হয়। ‘ইতোমধ্যে দেশে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজার এমন স্থিতিশীল থাকলে ক্রমান্বয়ে দাম আরও সমন্বয় হবে। কমতি দামের গম দেশে আসছে। তবে যেহেতু ডলারের দাম বেশি, সে কারণে দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে।’-আবুল বাশার চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বিএসএম গ্রুপ
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, দাম কম থাকায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রচুর গম আমদানি করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি সরকারও এ সময় রাশিয়া থেকে গমের একটি বড় চালান কিনেছে। এছাড়া ইউক্রেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও উরুগুয়ে থেকে গম কেনা হচ্ছে। ওইসব দেশ থেকে ২২৭ থেকে ২৪০ ডলারের মধ্যে প্রতি টন গম কেনা যাচ্ছে। একই উৎস থেকেই গম কিনছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও।
এদিকে হিসাব এমনটা হলে দেশে আটা-ময়দার দাম আরও কমার কথা। তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালের মার্চে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩৫-৩৬ টাকা, প্যাকেট আটা ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে আটা ৫৫ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় উঠে যায়। তবে এখন খানিকটা কমে খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এ সময়ের ব্যবধানে আটার দাম কেজিপ্রতি প্রায় ২০ টাকা বেড়ে কমেছে ১০ টাকা আর ময়দার দাম ২৫ টাকা বেড়ে কমেছে ১০ টাকা।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ গমের দাম ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে কমে এখন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকায় এসেছে। দাম সমন্বয়ের বিষয়ে দেশের অন্যতম গম আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে দেশে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্ববাজার এমন স্থিতিশীল থাকলে ক্রমান্বয়ে দাম আরও সমন্বয় হবে। কমতি দামের গম দেশে আসছে। তবে যেহেতু ডলারের দাম বেশি, সে কারণে দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে।
আমদানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে এখন সবচেয়ে বেশি গম আসছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটা এখন নেই, আমদানি স্বাভাবিক হয়েছে। ইউক্রেন থেকেও স্বাভাবিকভাবেই গম আমদানি হচ্ছে। আগের মতো পেমেন্টেও কোনো জটিলতা নেই। পাশাপাশি লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বন্ধ হয়েছে। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ হয়ে জাহাজ চলাচল করায় পণ্য পরিবহনের যে বাড়তি খরচ ছিল তা এখন হচ্ছে না। বাংলাদেশের গমসহ অন্যান্য পণ্য আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব কেটেছে। অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরেক বড় রপ্তানিকারক ভারত ২০২২ সালের ১৩ মে গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তবে বিকল্প অন্য দেশ থেকে গম আমদানি ভালো থাকায় এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের মধ্যে সিটি, মেঘনা, টি কে, নাবিল, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই গম আমদানি করে।
‘দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে পারছে। এখন সব সমস্যা কেটে গেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর আমদানিতে অনেক সমস্যা হয়েছে। এলসি সমস্যাও আমদানিতে প্রভাব ফেলেছিল। এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো রয়েছে আমদানি।’- তসলিম শাহরিয়ার, উপ-মহাব্যবস্থাপক, মেঘনা গ্রুপ
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে পারছে। এখন সব সমস্যা কেটে গেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর আমদানিতে অনেক সমস্যা হয়েছে। এলসি সমস্যাও আমদানিতে প্রভাব ফেলেছিল। এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো রয়েছে আমদানি।’
চালের পরই দেশে গমের তৈরি খাবার বেশি ভোগ করা হয়। এখন রুটি, পাউরুটি, বিস্কুটজাতীয় খাবারে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। বর্তমানে দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি খাদ্য গমের তৈরি। বাসা-বাড়িতে রুটি-পরোটা খাওয়ার চলও বেড়েছে আগের চেয়ে। একই সঙ্গে বেড়েছে গমের আমদানি। চাহিদা বাড়লেও গমের উৎপাদন না বেড়ে বরং কমেছে। সরকারি তথ্য বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে গমের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়ে বাড়েনি উৎপাদন। বরং কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে ব্যাপকহারে বেড়েছে আমদানিনির্ভরতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার টন। যেখানে এক দশক আগেও ২০১৩-১৪ অর্থবছর দেশে গমের উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ ৬ হাজার টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬৭ লাখ টন গম ও গমজাত পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এক দশক আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছর আমদানি করা হতো ৩৩ লাখ টন গম। এতে বর্তমানে আমদানি ব্যয় গুনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত, যা আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দামের সঙ্গে কম-বেশি হয়।-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com