যুগপৎ কর্মসূচি ঘিরে বাড়ছে তৎপরতা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি এবং ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদসহ নানান ইস্যুতে কর্মসূচিতে যাবে দলটি। এসব কর্মসূচিকে শুরুতে জনসম্পৃক্ততামূলক এবং পরবর্তিতে সময় সুযোগমতো একদফার আন্দোলনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব আন্দোলনের ধরন-প্রকৃতি নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন দলের হাইকমান্ড। একইসঙ্গে সমমনা দল ও জোটের সাথেও বৈঠক করছেন, নেওয়া হচ্ছে মতামত। এসব বৈঠকের মতামত থেকেই নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। আজ সোমবার এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ধারাবাহিক বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, দেশ বিরোধী চুক্তি, সীমাহীন দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা হবে। কর্মসূচি নির্ধারণে বিএনপি কেন্দ্রীয় ও সমমনা-মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে সবাই নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন। খুব শিগগির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। বিশেষ করে ভারতকে দেওয়া বাংলাদেশের করিডোর প্রসঙ্গে সোচ্চার হতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রস্তাব এসেছে। এই কর্মসূচিতে যেসব জেলার ওপর দিয়ে রেল করিডোর যাওয়ার কথা রয়েছে, সেসব জেলায় কর্মসূচি জোরদার করা হবে। জনগণকে সচেতন করতে, দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে, সবাইকে এই বিষয়ে সোচ্চার করতে পদযাত্রাসহ লিফলেট বিতরণ করা হবে। জানা গেছে, আগামী শুক্র অথবা শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার চিন্তা করছে দলটি। এজন্য গত দুইদিন ঢাকার পাশের জেলাগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন সাংগঠনিক নেতারা। এই সমাবেশ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে এমনটাই বলছেন তারা। কর্মসূচি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দায়িত্বশীলরা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কেউ কেউ এক মাসের কর্মসূচি নিয়ে কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ দেন। সেখানে কেউ কেউ আন্দোলনকে আরো গতিশীল করতে ডান-বামসহ ইসলামী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে যুগপৎ আন্দোলনে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। বেশিরভাগ নেতা ৩ মাসের কর্মসূচি রোডম্যাপ করার পরামর্শ দেন। তবে কতদিনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তাদের প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ এবং জাতীয় সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী যেসব অঞ্চল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রেল করিডর দিয়ে চলাচল করবে সেসব স্থানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দেয়ারও প্রস্তাব দেন তারা। পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়। এসব ইস্যুতে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ, রোডমার্চসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তাব দেয়া হয়। ১২ দলীয় জোটের শরীক বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে ইসলামী দলসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে যুগপতে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীদিনের কর্মসূচি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি।
বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচি নির্ধারণে দলের সিনিয়র নেতা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অংঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গত শনিবার দুই দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রা, গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব দেন নেতারা। একই সঙ্গে সমমনা দল ও মিত্রদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। দুই দফায় দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতা ছাড়াও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এসব প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হবে এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে যুগপৎ বেশ কিছু কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানা গেছে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তির দাবিতে জনগণ সোচ্চার। এই সরকারের সীমাহিন দুর্নীতি ও ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তির প্রতিবাদে দেশের মানুষ আন্দোলন করছে। ভারতীয় ট্রেনের জন্য যে করিডোর চুক্তি হয়েছে তা জাতীর জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। এটা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দেশের স্বার্থেই বিএনপি কর্মসূচি দিবে। শিগগিরই এ কর্মসূচি আসবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামীদিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই অবৈধ সরকার অপসারণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, সেই চলমান আন্দোলনকে আরও গতি সৃষ্টি করার জন্য, সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা আলোচনা করছেন। কর্মসূচি কি হবে তা পরবর্তীতে ঠিক করা হবে।