বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

রেমিট্যান্স কম আসলে দেশের অর্থনীতি ‘অসুস্থ’ হবে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাৎকার বিরূপাক্ষ পাল
রেমিট্যান্স কমে আসলে অর্থনীতি ‘অসুস্থ’ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রফেসর ড. বিরূপাক্ষ পাল। দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে তার আলাপচারিতা দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। তিনি জানান, কোটা আন্দোলন বেকারত্বের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিস্ফোরণ, আর সেই আন্দোলন থামাতে গিয়ে হামলা-গুলি ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ না।
তিনি বলেন, কোনো আন্দোলনই ইন্টারনেটে শুরু হয়নি, আবার ইন্টারনেটের কারণে শেষ হয়নি বরং এর কারণে বহুমুখী কুপ্রভাব পড়বে। বিশেষ করে অর্থনীতিতে ভয়ংকর অবস্থা হতে পারে। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানি প্রবাসীদের মাঝে দাগ কেটেছে, তাদের বেশি অংশই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে । তিনি এই আন্দোলনের পক্ষে ২০১৮ সালে কলাম লিখেছেন মন্তব্য করে তাকেও রাজাকার উপাধি দেওয়া হয় কি না সে ব্যাপারেও আশংকা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যারা পরিবার-পরিজনের জন্য দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠান তারাও এখন বিকল্প পথ খুঁজতে পারেন। এমনিতেই দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বিভিন্ন অনিয়ম আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন আছে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার শর্ত নিয়েও। এর মধ্যে যদি প্রবাসীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে তাদের কষ্টের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করেন তাহলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে। যে রিজার্ভ নিয়ে আমাদের এত পরিকল্পনা তার অন্যতম প্রধান উৎস কিন্তু রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স শক্তিশালী হলে রিজার্ভও শক্ত হয়, সুস্থ থাকে। কিন্তু এভাবে রেমিট্যান্স কমে আসলে দেশের অর্থনীতি ‘অসুস্থ’ হয়ে যাবে।
রিজার্ভ কমে গেলে আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানো কষ্টসাধ্য হবে । যার প্রভাব পড়বে দেশের অন্য সেক্টরগুলোতে ।
তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার পথ নাই প্রবাসীরা দেশের আর্থিক চাকা সচল রাখতে অবদান রাখছেন। তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করলে তারাতো ক্ষুব্ধ হবেই, প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখায় একদিকে যেমন হুন্ডিতে লেনদেন বাড়বে তেমনি ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠানোর কারণে দেশের আর্থিক খাতেও এর প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
ড. বিরূপক্ষ পাল যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং দেশে বৈধ উপায়ে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ।
প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত আমদানি নির্ভর রপ্তানি খাত (যেমন তৈরি পোশাক) প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন চালু রাখতে হিমশিম খাবে। সাময়িকভাবে সরকার বন্ধুপ্রতিম দেশের মুদ্রায় ঋণ নিয়ে তা দিয়ে রপ্তানি খাতকে সাহায্য করতে চেষ্টা করলেও দীর্ঘ এমনকি মধ্যম মেয়াদেও তা টেকসই হবে না, কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের কাঁচামালের উৎস একক কোনো দেশ না বরং একাধিক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। শ্রমঘণ রপ্তানিখাতে এমন যেকোনো সংকট দেশে দারিদ্র্যের হার এবং সামাজিক অস্থিরতা জ্যামিতিক হারে বাড়াবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৭ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
ব্যাংকাররা বলছেন, কোটা আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স কমেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে। (সিদ্দিকুর রহমান সুমন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com