সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তৃতীয় শক্তি না খুঁজে নিজেদের অপশক্তিকে চিহ্নিত করুন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের অব্যাহত বাধা, গুলি, দমন, নিপীড়ন, গ্রেফতার, নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ-বিদেশের কোনো পরামর্শ কর্ণপাত না করে ফ্যাসিস্ট সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মামলা, হামলা, দমন ,পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশ ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর, যশোর, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় বর্বরোচিত কায়দায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং গ্রেফতার চালিয়েছে। সারা দেশে প্রায় শতাধিক নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রেফতার করেছে, ছাত্রীদের করেছে লাঞ্ছিত। পুলিশের নির্মম আঘাত থেকে রক্ষা পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া। বরিশালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় যুগান্তরের সাংবাদিক শামীম আহমেদ এবং যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান হৃদয়সহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। সরকার এবং সরকারি বাহিনী এমনভাবে মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে যে সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দেখেছে, আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই মামলায় আসামি করে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলিফ শাহারিয়ার মাহিমকে। সরকার প্রধান এবং সরকারের মন্ত্রী-নেতারা এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কতিপয় আওয়ামী ভাবাপন্ন সদস্যরা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারে আশ্রয় নিয়ে বলছে, তথা কথিত ‘তৃতীয় শক্তি’ নাকি গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অথচ সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তার পরেও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এই মিথ্যচারের কোরাস গেয়েই চলেছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই বর্বর অবৈধ সরকার সভ্য মানুষের উপদেশ কখনোই গ্রহণ করবে না, কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণহত্যা চালিয়ে বর্বর শাসন কায়েম করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
বিবৃতিতে তিনি এদেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জন অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এই সরকার আজ রাষ্ট্রঘাতি-প্রাণঘাতি সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিকৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে যে, তারা নিজেরাই বলছেন, শ্রীলঙ্কার মতো গণভবন দখল করে নিবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, অতি দ্রুত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার কাছে ফিরিয়ে দিন। নির্যাতন যত বৃদ্ধি পাবে গণ প্রতিরোধ্য তো দুর্বার হবে।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি খুনি সরকারের অন্যায় ও বেআইনি হুকুম, আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জনিয়ে বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সঙ্কেত । মহাসচিব, দেশের, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের সকল দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্য বদ্ধ হয়ে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এই গণতন্ত্র বিনাশী, লুটেরা, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী, খুনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান।