বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জেলা শহর, সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা আশুগঞ্জ গোলচত্বরে অবস্থান নেওয়ায় সকাল
১০টার পর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ পালনের জন্য ২০-২৫ জন জড়ো হন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীও বাঁশ, লাঠি ও স্টাম্প নিয়ে সেখানে জড়ো হন। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জয়ন্তী বিশ্বাস ও তাঁর স্বামী সুফিয়ান আজাদসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার পর কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী আশুগঞ্জ গোলচত্বরে জড়ো হন। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটতে বাধ্য হন।
এ সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর আশুগঞ্জ টোল প্লাজার পুলিশ বক্সে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা পৌনে ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা আশুগঞ্জের দিকে এগিয়ে গিয়ে হামলা চালান এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বেলা দেড়টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলের সামনে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আফরিন ফাতিমার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা সেখানে থাকা কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরতলির বিরাসার, জেলা শহরের কাউতলী, কুমারশীল মোড়, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনের সড়ক, দক্ষিণ মৌড়াইল ও কাউতলীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের পক্ষে নামেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বিরাসার এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। পরে আন্দোলনকারীরা একত্র হয়ে জেলা শহরের পুরাতন জেল রোড এলাকায় পৌঁছান। শহরের হালদারপাড়া এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীসহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের কাছে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায়।
দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন। তাঁরা কলেজপাড়া থেকে কুমারশীল মোড় পর্যন্ত এলাকা দখলে নেন।
এদিকে বেলা তিনটার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে পুলিশের বসার একটি প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ও শিল্পকলা একাডেমির কার্যালয়ের ফটকের বাইরের রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। শহরে মানুষের চলাচল কমে গেছে। শহরে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।