মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা এক দাবির বিজয় নিশ্চিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের সংবাদ পেয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন। উপজেলার পাড়া-মহল্লা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সাধারণ মানুষ বিজয় উল্লাস করে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে ছুটে আসেন, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মিস্টি মুখ করান। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল শ্রীমঙ্গলে শেখ হাসিনার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল বের করে ভুয়া, ভুয়া স্লোগান দিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্তরের দিকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ছুটে আসেন ছাত্র-জনতাসহ সাধারণ মানুষ। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকেন। বেলা ৪টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দখল করে উল্লাসকারী ছাত্র-জনতার মিছিল চলে। এসময় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা, মৌলভীবাজার রোড, হবিগঞ্জ রোড, স্টেশন রোড এবং কলেজ রোড উল্লাসকারীদের দখলে ছিল। মহাসড়কে অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যোগ দেন। এরপর হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে শহরে বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারিরা বলেন, শেখ হাসিনা ভূয়া, দেশ ছেড়ে পালালো কেন? আজকে দেশে ছাত্র জনতার জয় হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি শ্রীমঙ্গল থানার সামনে আসামাত্র মিছিলরত শিক্ষার্থীদের বাঁধা দেয় পুলিশ। ওখান থেকে বাঁধা অতিক্রম সামনে আগাতে চাইলে মিছিল তুমুল সংঘর্ষে রুপ নেয়। একপর্যায়ে পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও অন্যান্য গুলি ছুড়ে পুলিশ। এসময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শতাধিক মানুষ। এঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো শহরজুড়ে বিশাল ক্ষোভের সৃষ্টি সৃষ্টি হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন কালিঘাট রোডের ইসমাইল হোসেন, ফারদিন, সিন্দুরখান রোডের ইমরান, জুয়েল, ছফেদ মিয়া রোডের ইমরান, জালালিয়া রোডের কামরুল, স্টেশন রোডের জিহাদ, রুবেল, উত্তর ভাড়াউড়ার নাজমুল, শান্তিবাগের আওয়াল, বিরাইমপুরের জুয়েল, মুসলিমবাগ এলাকার এনামুল হক, রামনগরের রুহেল, কাকিয়া বাজারের সাইফ, রুমেল, কলেজ রোডের রফিকুল, লালবাগের কাওছার, রমজান, আলিশারকুলের আব্দুল আহাদসহ শতাধিক। আহতদের প্রথমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা অবনতি হওয়ায় গুলিবিদ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা আহতদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বেলা ৫টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ মানুষের সারি সারি। মাথা, চোখ, বুক, পেট ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকেই। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগেই চিকিৎসা নেন অন্তত অর্ধশতাধিক। সন্ধা সাড়ে ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাসিফ আহমেদ বলেন, বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছি? অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। লিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা জাহিদ, আবু জাফর, সাব্বির, ইসমাইল, শুভ বলেন, আমরা সবাই আনন্দ মিছিল করছিলাম। পুলিশ হটাৎ করেই অতর্কিতভাবে আমাদের উপরে হামলা চালায়। প্রথমে রাবার বুলেট মারলেও পড়ে অন্যান্য বুলেট ছুড়তে থাকে। আমরা অনেকেই গুলিবিদ্ধ। অনেক শিশু রয়েছে। এদিকে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কের শ্যামা মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ বেশ কিছু জায়গায় হামলা ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভুষনকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেনি।