ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের হত্যাকা-ের জন্য। গত শুক্রবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেছেন, শেখ হাসিনা কেন বাংলাদেশ থেকে পালালেন তা জানতে আমি উৎসুক। শেখ হাসিনার সময়ে যেসব হত্যাকা- হয়েছে, আমরা সেসবের বিচার চাইবো। এটা আমাদের অন্যতম দাবি। যদি তিনি ফিরে না আসেন, তাহলে আমরা সে ব্যাপারে কাজ করবো।
নাহিদ বলেন, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে চাই। তার বিচারের ইস্যুতে আলোচনা চলছে বলেও জানান। আরেক ছাত্র নেতা আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা চাই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসুক ও বিচারের সম্মুখীন হোক।
উল্লেখ্য, ছাত্রজনতার বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যান। সেখান থেকে তার লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্šÍীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা ও সব মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে জোলি বলেন, ‘বাংলাদেশে চলমান সংকট সমাধানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এগিয়ে যাওয়ার পথকে কানাডা সমর্থন করে। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকারকে স্বাগত জানাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক শাসনের পথ প্রশস্ত এবং শান্তি ফেরানোর পথে এটা প্রথম পদক্ষেপ।’
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবর্তনের এই সময়ে কানাডা এমন এক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়; যেটা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তরুণ, নারী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সমাজের সব ক্ষেত্রের বৃহত্তর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত।’ সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান পুর্নব্যক্ত করে মেলানি জোলি বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।’ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা সমর্থন করা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট ও অন্যান্য যোগাযোগের উপায়গুলোয় প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত রাখতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মেলানি জোলি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, মৃত্যু ও সহিংসতার সব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হচ্ছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারে সদস্য ১৭ জন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল শনিবার এক্সে পোস্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি লিখেন, ‘সবাইকে শান্ত ও সংযত থাকতে তিনি (ড. ইউনূস) যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এর আগে গতকাল যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারকে স্বাগত জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি কখনোই পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি। একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগল এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি। সংবিধান অনুযায়ী, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
জয় জানান, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী তিন মাসের ভেতর বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চাইছেন জয়। যেখানে অংশ নেবে আওয়ামী লীগও।
জয় বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। না হলে, আমরা বিরোধী দল হব। যেটাই হোক ভালো হবে। আমি মিসেস খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনে খুশি হয়েছি। আসুন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্যবদ্ধ সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে আমি বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি, অসম্মতিতে একমত হতে পারি এবং সবসময় একটি সমঝোতা পথ খুঁজে পেতে পারি।’
আওয়ামী লীগ চাইলে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ভাববেন জয়, ‘এই মেয়াদ শেষে এমনিতেই আমার মা রাজনীতি থেকে অবসরে যেত। যদি দল আমাকে চায়, আমি অবশ্যই সেটা বিবেচনায় রাখব।’
রয়টার্সের দেওয়া তথ্যমতে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনের মতো। সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ছাত্ররা। জয় বলেন, ‘গ্রেপ্তারের হুমকিতে আমার মা আগেও কখনো ভয় পাননি। আমার মা ভুল কিছু করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন, এর মানে এই নয় যে, আমার মায়ের নির্দেশেই কাজগুলো করেছেন তারা। এর মানে এই নয় যে, আমার মা এসবের জন্য দায়ী। যারা এর জন্য দায়ী, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করার জন্য আমার মা কাউকে আদেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা ঠেকানোর চেষ্টা করে গেছে কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন।’