হিন্দু মহাজোটের সভাপতি এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের উপরে আওয়ামী লীগ নেতারা হামলা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেরিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এসব তথ্য দেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখনই কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েন ওই মুহূর্তে হিন্দুদের ঘাড়ের ওপরে চেপে সংকট থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে। বর্তমান সময়ে এখন দেখতে পাচ্ছি- ভারতের কিছু নেতাদের আশ্বাসে উত্তরবঙ্গের বেশকিছু হিন্দু সীমান্তে গিয়ে জমা হয়েছে। তারা সেখান থেকে ভিডিও করে ছবি তুলে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এই ২ থেকে ৩দিন তারা সীমান্তে অবস্থান করেছে, তাদেরকে একটু জলও দেয়া হয়নি। অথচ ভারতের এক নেতা বলছে- ভারতে ১ কোটি লোকের আমরা শরণার্থী হিসেবে নেবো। এভাবে উস্কানি দিয়ে এই কাজগুলো করছে।
গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, বর্তমানে আবার কিছু নিরীহ হিন্দুদের ওপরে হামলা হচ্ছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, বাসার আশপাশে কিছু জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে তাদের ওপরে কিছু দুষ্কৃতকারী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করছে। এর মধ্যে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের একটা বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
সেখানে একজন বিএনপি নেতার কথা বলে ডাকাতি করেছে। এরপর তাদের আটক করার পরে দেখা গেল আওয়ামী লীগের কর্মী। আরেকটি জায়গায় একজন প্রতিমা ভাঙতে গেছে, তাকে হাতে-নাতে ধরার পরে দেখা যায় তার গায়ে বিএনপি’র একটি জার্সি। পরে ভিডিও ফুটেজে তার বক্তব্যে দেখা যায়, তাকে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা টাকা দিয়ে বিএনপি সাজিয়ে পাঠিয়েছে। একটা গ্রামের বেশকিছু জায়গায় হামলা হয়েছে, তারা নিজেরাই (ভিকটিম) বর্ণনা করেছে অমুক মেম্বার ও তার লোকজন এসে আমাদের বাড়িতে হামলা করছে। তারা আওয়ামী লীগের লোক। তিনি বলেন, আজকেই শুধু এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়। আপনারা যদি দেখেন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের প্রায় সবগুলো মন্দির ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। সেই ঘটনার বর্ণনা করেছে শেখ হাসিনার তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু। তার ডায়েরি পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ পায়। সেখান থেকে জানা যায়। ‘আমার ফাঁসি চাই’- নামক সেই বইয়ের মধ্যে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশে আসবে। সেই সময়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা রেন্টুকে বলেছেন- ‘তুমি সারা দেশে হিন্দু-মুসলিমের বিরোধ লাগিয়ে দাও। সার্ক সম্মেলন প- করতে হবে।’ উনি এটা নিয়ে বাদানুবাদ হওয়ার পরেও রেন্টুকে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। এরপর ঢাকার প্রতিটি এলাকার মাস্তান, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারীদের টাকা দিয়ে মন্দিরগুলো পুড়িয়েছে। বইয়ে রেন্টু নিজে বলেছেন- ‘এর পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা হচ্ছেন শেখ হাসিনা’। হিন্দু মহাজোটের এই নেতা বলেন, পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অনেক জেলায় কুমিল্লা থেকে আরম্ভ করে শতশত মন্দির পুড়েছে। এর নির্দেশদাতাও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এমপি বাহার। সেই সময়ে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ হিন্দু নিহত হয়েছে। শতশত মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শাল্লার ঘটনায় সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতা গ্রাম ধরে জ্বালিয়ে দিয়েছে। নাসিরনগর, কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দির পোড়ানোর ঘটনা আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্যোগে সংঘটিত হয়। এছাড়া যশোরের অভয়নগর সহ রংপুরের পীরগঞ্জে একটা গ্রাম ধরে জ্বালিয়ে দেয়া হয়, সেখানে হাতেনাতে যুবলীগের নেতা ধরা পড়ে।