একদফা আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়নের খবরে সারাদেশের মত চকরিয়ার ডুলাহাজারায়ও আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিলের উশৃঙ্খল একাংশ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে তান্ডব চালিয়েছে। তারা পার্কের সম্মুখের বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিয়ে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক লিখে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিশালকার মুর্তিটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে ক্যান্টিন ভাংচুর করে। দেড়-দুই হাজার উশৃঙ্খল লোক ভেতরে ঢুকে পার্কের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনায় পার্কের দেড় কোটি টাকার সম্পদ ধংস হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকাল থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত এ তান্ডব চলে। পার্কের সম্পদ ধংসের ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছেন নিশ্চিত করেছেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পর বৃহস্পতিবার পার্কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। পরিদর্শন পরবর্তী সাফারি পার্কের হামলা তা-বের ঘটনাটি তিনি ইতোমধ্যে বনপ্রশাসন ও সরকারের উচ্চ মহলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনাটি চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কমা-ার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া থানার ওসিকে জানিয়েছিলেন বলেও দাবী করেন পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে দেড় থেকে দুই হাজার লোক অতর্কিত ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হামলে পড়ে। প্রথমে তাঁরা পার্কের বাইরে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে পার্কের বাইরে সদ্য নির্মিত কেন্টিনের দরজা জানালার সব কাচ, ভেতরের ডেকোরেশন, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ভেঙে চুরমার করে লুটে নিয়ে যায় সদ্য লাগানো দুইটি এসি। এরপর হামলাকারীরা একে একে সবাই পার্কের সামনের সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে প্রধান গেইট খুলে হামলা তান্ডব ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা পার্কের প্রশাসনিক ভবনের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকের অফিসকক্ষ এবং সম্মেলনকক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে চেয়ার টেবিলসহ দামি সব আসবাবপত্র ও দরজা জানালা ভেঙে তছনছ করে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় অফিসের কম্পিউটার, সেখানে রক্ষিত পার্কের সিসিটিভি। উপড়ে ফেলা হয়েছে প্রশাসনিক ভবনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো। সাফারি পার্কের স্টাফরা জানিয়েছেন, হামলার সময় অফিসের তিনটি মোটর সাইকেল ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের অবকাঠামো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে তছনছ করা হয়েছে পার্কের ভেতরের দুইটি ডাক বাংলোর বিভিন্ন অবকাঠামো। হামলা তান্ডবের সময় পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে প্রাণ বাঁচাতে পার্কে দায়িত্বরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়ে পার্কের ভিতরে জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণে রক্ষা পান বলে জানিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা/তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম। ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নারকীয় হামলা তান্ডবের এ ঘটনায় পার্কের দেড় কোটি টাকার বেশি সরকারি সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্থাপনা নতুন করে তৈরি করতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঘটনারদিন সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু সেইদিনের উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর সুযোগ ছিলো না। এখন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত লুটকরা দুইটি এসি সহ বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম।