মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রাতভর ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি জনপদের টিলাগুলো ধসের শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। আবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জানা যায়, সোমবার ভোরে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া এলাকায় পাহাড় ধসে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে কয়েক ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ ছিল। এতে অফিসগামী চাকুরিজীবি এবং পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। মঙ্গলকার (২০ আগস্ট) সরজমিন ভানুগাছ রোডের সিএনজি সাট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রীরা কমলঞ্জ যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকায় শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়ি ছাড়ছেন না চালকরা। আব্দুল গফুর নামের এক যাত্রী বলেন, আমি কমলগঞ্জ যাওয়ার জন্য সকাল থেকে প্রায় দুইঘন্টা যাবত স্ট্যান্ডে বসে আছি, কিন্তু কোনো ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ছেন না। সিএনজি চালক নুরুল ইসলাম বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া এলাকায় ভোরে টিলা ধসে পড়ে সড়কের দুপাশে যানবাহন আটকা পড়ে আছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কয়েক ঘন্টা লাগবে। তাই আমরা স্ট্যান্ড থেকে আপাতত গাড়ি ছাড়ছি না। তবে বিকল্প রাস্তায় যারা যেতে চায় তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া নিয়ে ভৈরববাজার-মৃর্তিঙ্গা চা বাগান ঘুরে মুন্সিবাজার হয়ে কমলগঞ্জ যাাচ্ছি। বেসরকারি চাকরিজীবি রবিউল আমান বলেন, আমাকে যেকোনো মূল্যে অফিস করতে হবে। তাই ডভল ভাড়া দিয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে হলেও কমলগঞ্জ পৌছতে হবে। স্থানীয়রা জানান, রাতভর ভারি বৃষ্টির ফলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মূল সড়কে একটি বাঁশঝাড়ের ঠিলা ধসে পড়ে। এতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। মঙ্গলবার ভোর রাতে লাউয়াছড়া উদ্যানের জানকিছড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলের দু’পাশে মালবাহী গাড়িসহ ছোট-বড় বহু যান আটকা পড়ে। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে বন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ধসে পড়া টিলার মাটি সরানোর কাজ করছেন। এদিকে, স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে নিরালা পুঞ্জিসহ পাহাড়ি জনপদের টিলাগুলো ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন, আশিদ্রোন, সিন্দুরখানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এর নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।সিন্দুরখান ইউনিয়নের কৃষক কবির মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার ক্ষেতে লাগানো আউস ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার আনিসুর রহমান জানান, সোমবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অঞ্চল আরও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।