রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

কমলনগরে বসতঘরে থই থই পানি

আবছার উদ্দিন রাসেল (কমলনগর) লক্ষ্মীপুর
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া এলাকার মাওলানা হোসাইন আহমাদ। মাস্টার্স সমমান দাওরায়ে হাদীস পাশ করা একজন আলেম। ডাক্তারপাড়া হোসাইনীয়া মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) তিনি। মাদরাসার পাশেই তার বসতবাড়ী। তার মাদরাসা ও বাড়িটি ভূলুয়া নদীর খুব কাছেই। টানা এক মাসের ভারি বৃষ্টি ও ভূলুয়া নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে পানি বন্দি হয়ে পড়ে মাদরাসা ও তার বসতঘরটি। মাওলানা হোসাইন তার স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও পার্শ্ববর্তী মেঘনা ও ভূলুয়া নদীর অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে ডাক্তারপাড়া এলাকটি সম্পুর্ন তলিয়ে যায়। ওই এলাকার লোকালয়ের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি,মসজিদ মাদরাসাও সম্পুর্ন পানি বন্দি। নদী, মাদরাসার ঘর ও মাঠ সব একাকার হয়ে যায় পানিতে। তার বসত ঘরের মধ্যে পানি ডুকে ঘরের ছকিও ডুবে গেছে। গত এক সাপ্তাহ ধরে কোন ভাবেই রান্না করা হয়নি। মাওলানা হোসাইন মাদরাসার একটি কক্ষে কোনমতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ওই এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিছে ডুবে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ত্রাণের গাড়ী ওই এলাকায় যেতে পারছেনা। সাহায্য সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে ডাক্তারপাড়া এলাকাটি। সাথে রয়েছে একটি আশ্রয়ন প্রকল্প। সেখানে প্রায় শতাধিক পরিবারও পানিতে আটকা পড়েন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব মতে, স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক তিন মিটার পানির উচ্চতা বেড়েছে। টানা বৃষ্টির পানি ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় আরও অন্তত কয়েদিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে। মাওলানা হোসাইন এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বর্ষা মৌসুমের এ সময়টাতে পানির সঙ্গে তাদের যুদ্ধ করতে হয়। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার সময়ে নদীতে যখন পানির উচ্চতা বাড়ে, তখন পানিতে তলিয়ে যায় তাদের বাড়ি। এ বছর এক মাসের মত টানা বৃষ্টির পানিতে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটে তার সহ ওই এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের । রান্নাঘরের চুলা ও বসতঘরে পানি উঠে যায়। ফলে থাকা ও প্রতিদিনের খাবার তৈরি করতে পারছেনা তারা। কোন ভাবে একবেলা খেলে অন্যবেলা উপবাস থাকতে হয় তাদের। তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত পানির কারণে বাড়িতে গবাদিপশু কিংবা হাঁস পালন করতে পারি না। জোয়ারের পানি নামার সময় পানির সঙ্গে হাঁসগুলো হারিয়ে যায়। তাই হাঁস-মুরগি পালন করা বন্ধ করে দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, পানি নামার সময় ঘরের কাঁচা ভিটা ভেঙে যায়। তখন বসতঘর ঝুঁকিতে পড়ে। বার বার মেরামত করেও কাজ হয় না। যতবার পানি উঠবে, ততবারই এমন পরিস্থিতি হয়। পানির কারণে এক মাস ধরে মাদরাসা বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে পানির ভয়াবহ এতো বেশী যে, কখন মাদরাসা খুলবে তার কোন নিশ্চয়তাও নেই। একই এলাকার ফাতেমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। এ প্রতিবেদককে এ নারী বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরে উঠে গেছে। বসত ঘর ও রান্নার চুলোয় পানি বন্দি। গত কয়েকদিন থেকে রান্না করতে পারছিনা। এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খবর নেয় না। শুধু ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে। দুর্যোগের সময় কাউকে কাছে পাই না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, যেখানে খবর পাচ্ছি। সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি। আর ডাক্তারপাড়া এলাকাটির যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। যত খরাপ হউক না কেন আমরা ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে যাবো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com